জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সমঝোতা ও অঙ্গীকার নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী ওয়েবিনার আয়োজন করেছে পরিবেশ সচেতন তরুণদের সংগঠন ‘দ্যা ইকো-একটিভিস্ট’।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে ভার্চুয়াল এ ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক সঞ্জয় বিশ্বাসের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোসলেম উদ্দিন মুন্না ও ক্যাব কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন।
আলোচকরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ২০১৫ সালে প্যারিসে যে চুক্তি হয়েছিল, তা প্রকৃত অর্থেই ঐতিহাসিক। চুক্তিটির আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চুক্তিতে সম্মতি দেওয়া দেশগুলো চলতি শতকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির মাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রির বেশি হতে না দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়।
আলোচকরা আরো বলেন, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এখন যে হারে গ্রিনহাউস গ্যাসের উদ্গিরণ ঘটছে, তা বড় আকারে কমাতে হবে। এক্ষেত্রে আলোচনায় এসেছে নেট জিরো। এর অর্থ যতটা ক্ষতিকর গ্যাস তৈরি হচ্ছে, বায়ুমণ্ডল থেকে ঠিক ততটাই ক্ষতিকর গ্যাস অপসারণ করে ভারসাম্য আনা। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো অর্জনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
জাতিসংঘের প্রসঙ্গ এনে আলোচকরা বলেন, ২৬ অক্টোবর জাতিসংঘ জানায়, বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্গিরণ কমানোর যেসব পরিকল্পনা পাওয়া গেছে, তাতে চলতি শতকের শেষে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হার পরিকল্পিত দেড় ডিগ্রির জায়গায় ২ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে দাঁড়াবে। যা গ্যাস নির্গমন কমানোর মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কম।
আরও পড়ুন : বৈশ্বিক জোট গড়ে তোলার মাধ্যমে খাদ্যের অপচয় হ্রাস করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
উন্নয়নশীল দেশগুলোর দূষণের পরিমাণ শিল্পোন্নত দেশগুলোর বিপরীতে জনসংখ্যা বিবেচনায় মাথাপ্রতি অনেক কম। অতীত দূষণের সিংহভাগের দায়ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এরমধ্যে বাংলাদেশ, মালদ্বীপসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেশ কয়েকটি দেশের ঝুঁকি অনেক বেশি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এসব দেশের অনেকটাই, এমনকি পুরোটাই তলিয়ে যেতে পারে।
ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণের জন্য সর্বশেষ ২০১৯ সালেও ধনী দেশগুলো দিয়েছে ৮০০ কোটি ডলার। আগের বছরগুলোয় এর পরিমাণ ছিল আরও কম।
সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর গ্রুপ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বর্তমান চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জলবায়ুবিষয়ক এক শীর্ষ বৈঠকেও ওই প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বলে জানান আলোচকরা।
আলোচকরা বলেন, নতুন পরিকল্পনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বার্ষিক সহায়তা ১০ হাজার কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার সময়সীমা ২০২৩ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্য পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে কপ–২৬ এর প্রতি আস্থা তৈরি ও গতি সঞ্চারের জন্য ১০ হাজার কোটি ডলার সাহায্যের অঙ্গীকার এখনই পূরণ করতে হবে।
কয়লাভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার, জলবায়ু বিষয়ক নীতিনির্ধারণে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ, প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়নের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবি উত্থাপিত হয় আলোচকদের কণ্ঠে।
ভার্চুয়াল আয়োজনে চট্টগ্রামের তরুণ পরিবেশ কর্মীদের অংশগ্রহণে একটি প্রশ্নোত্তরপর্ব অনুষ্ঠিত হয়।