চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) মেডিসিন বিভাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন নগরের দেওয়ানহাটের ডেঙ্গু আক্রান্ত মো. নুরুল আমিন (২৩)। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও হাসপাতালের বেডে এই যুবক শুয়ে আছেন মশারি ছাড়াই! অভিন্ন চিত্র দেখা গেছেন মেডিসিন বিভাগের বাকি তিন ওয়ার্ডেও। এসব ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা আছেন মশারি ছাড়াই!
ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে অবহেলার এমন চিত্র দেখা গেছে বেসরকারি মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগেও। হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগীর বেডেই নেই মশারি! অথচ সন্ধ্যা নামলেই ওয়ার্ডটিতে বাড়ে মশার উপদ্রব। এ সময় মশার হাত থেকে বাঁচতে কয়েল জ্বালাতে দেখা যায় রোগীদের।
চট্টগ্রামে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সচেতনতা। ভয় বাড়িয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি চমেক হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে। অথচ এই দুই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে নেই সচেতনতা!
সরেজমিন চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডেঙ্গু কর্নার ঘুরে দেখা যায়, কিছু রোগী মশারি ব্যবহার করলেও বাকিরা করছেন না। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিত্র আরও ভয়াবহ। এখানে কোনো ডেঙ্গু রোগীকেই মশারি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা মশারি ব্যবহার না করলে বিপদ বাড়তে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে রক্ত পান করে সুস্থ কারও দেহে যদি ওই মশা কামড় দেয় তবে তার দেহেও ডেঙ্গুর জীবাণু ঢুকে যাবে। তাই ডেঙ্গু রোগীদের মশারি ব্যবহার জরুরি।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (১৪ নভেম্বর) পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৬ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৯ জন মারা গেছে। বাকি ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে নগরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে সাড়ে ৩ হাজার।
যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ইমরান হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে রক্ত পান করে ওই মশা যদি কোনো সুস্থ মানুষকে কামড় দেয় সেক্ষেত্রে ওই সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু প্রবেশ করার ঝুঁকি থাকে। এজন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের আমরা সবসময় মশারি ব্যবহার করতে বলি।
চমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা কেন মশারি ব্যবহার করছেন না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা সব রোগীকে বারবার বলে আসছি ঝুঁকি এড়াতে তারা যেন মশারি ব্যবহার করে। কিন্তু অনেকেই আমাদের নির্দেশনা মানছে না। আমরা রোগীদের এটাও বলেছি, আমাদের নির্দেশনা না মানলে সুস্থ হওয়ার আগেই হাসপাতাল ত্যাগের ছাড়পত্র দিব। এরপরও কেউ কেউ আমাদের নির্দেশনা মানছে না। এতে ঝুঁকি বাড়ছে। রোগীদের কেউ কেউ মনে করছে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, সেজন্য অবহেলা আরও বাড়ছে।
ডা. ইমরান বলেন, আমাদের স্টাফদেরও নির্দেশনা দিয়েছি এ বিষয়টি দেখভাল করতে। আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছি, আমাদের কোনো ত্রুটি নেই। কোনো রোগী যদি নিজেকেসহ বাকিদের ঝুঁকিতে ফেলে এটি বিবেকের প্রশ্ন।
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো ডেঙ্গু রোগী বাড়ছেই। সবধরনের ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি আমরা। একটা হচ্ছে সাধারণ ডেঙ্গু, এতে তেমন জটিলতা হয় না। আরেকটি হচ্ছে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার, এটি আরেকটি ডেঙ্গু শকড সিনড্রম। তবে আশার বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়রা কানিজ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আসলে আমাদের হাসপাতালে রোগী অনেক বেশি থাকে। আমরা সবসময় রোগীদের মশারি ব্যবহার করতে বলি। অনেক রোগী তা মানেন না। আমাদের মেডিসিন বিভাগের নার্সরাও বিষয়টি দেখভাল করেন। হাসপাতাল থেকেও আমরা যতজনকে সম্ভব মশারি দেওয়ার চেষ্টা করি৷ আমাদের মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডে ‘এ’ ক্যাটাগরি অর্থাৎ ডেঙ্গু ক্লাসিক্যাল স্টেজের রোগী বেশি। তাদের বেশিরভাগই ৪-৫ দিনে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক রোগীই মশারির ব্যবহারটিকে অবহেলা করছে। তবে এতে ঝুঁকি রয়েছে।
আলোকিত চট্টগ্রাম