বিমানবন্দরে র্যাপিড পিসিআর টেস্ট স্থাপন না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রামের সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীরা। কারণ দেশটি নির্দেশনা দিয়েছে বিমানবন্দরে র্যাপিড পিসিআর টেস্ট ব্যবস্থা না থাকলে আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে পারবেন না বাংলাদেশের নাগরিকরা।
কয়েকদিন ধরে বিমানবন্দরে পিসির টেস্ট চালুর জন্য আন্দোলনে নামেন আটকে পড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীরা। তারা বিমানবন্দরে দ্রুত পিসিআর টেস্ট স্থাপন করে তাদের সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্মস্থলে ফেরার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানান।
জানা গেছে, দুবাইওয়ালা অধ্যুষিত চট্টগ্রামে ২০ হাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতের চাকুরে ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। সারা দেশে প্রায় ২৫-৩৫ হাজার প্রবাসী রয়েছেন যার সিংহভাগ চট্টগ্রামের। আমিরাত থেকে দেশে আসা প্রবাসীরা লকডাউনে আটকে পড়েন। করোনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৩ মে বাংলাদেশ থেকে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। তাই তখন আর ফিরতে পারেননি প্রবাসীরা।
আরও পড়ুন: ‘চুরির হাট’ ইপিজেড টু বিমানবন্দর সড়ক, ভাগ বসান পুলিশের সোর্স
কয়েকদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামীদের জন্য পিসিআর টেস্ট বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে দেশটি। এতে ২০ হাজার প্রবাসী চরম বিপাকে পড়েন। ইতোমধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আরব আমিরাত সরকারের নিয়মানুযায়ী যেখান থেকে যাত্রীরা বিমানে ফ্লাই করবেন, তার ৬ ঘণ্টা আগে অবশ্যই র্যাপিড পিসিআর টেস্ট করিয়ে নেগেটিভ সনদ নিয়ে সেখানে যেতে হবে।
কিন্তু আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এখনও পর্যন্ত কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের প্রবাসীরা আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন৷
আরব আমিরাত এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্ট স্থাপন না হওয়ায় বাংলাদেশিদের সে দেশে ভ্রমণ সম্ভব নয়। দুবাই ট্রাভেল এজেন্সি স্মার্ট ট্রাভেলসের অপারেশন ম্যানেজার মালিকা বেডেকার খালিজ টাইমস পত্রিকাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ ইচ্ছুকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভ্রমণকারী ও পর্যটন ভিসাধারীদের ভ্রমণ প্রক্রিয়া কেমন হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ম স্পষ্ট করলে আমরা বিমান আরো বাড়াব।
এদিকে বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্ট স্থাপনের দাবিতে মানবন্ধনসহ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামীরা। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে কয়েকদিন আগে একটি সংগঠন এ দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেন। সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) একই দাবিতে আরও একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমিরাত প্রবাসী মুফতি মাওলানা সলিম সিদ্দিকী।
জানা গেছে, কর্মস্থলে ফিরতে না পারায় অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অনেকের শেষ হওয়ার পথে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া ছাড়াও দোকান ভাড়া এবং বিদ্যুৎ বিল বাকিসহ নানা ধরনের সংকটে পড়েছে। দ্রুত ফিরতে না পারলে হারাতে হবে চাকরি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সংযুক্ত আরব আমিরাত শারজার ব্যবসায়ী হাটহাজারীর লালিয়ারহাট এলাকার শফিউল আজম ৫ মাস আগে আমিরাত থেকে দেশে এসে লকডাউনে আটকা পড়েন। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে না পেরে সব হারানোর পথে তিনি। বিমানবন্দরে র্যাপিড টেস্ট স্থাপন না হওয়ায় চালু হয়নি বিমান। তাই শফিউল আজমের মতো হাজারো ব্যবসায়ী ও চাকুরে এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে।
আরও পড়ুন: করোনা—‘ইমিউনিটি বুস্টার’ আবিষ্কারের দাবি বাংলাদেশি গবেষকের
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে আটকে পড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে র্যাপিড আরটি-পিসিআর মেশিন বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি’র নেতৃত্বে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (কল্যাণ শাখা) মো. সরওয়ার আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী যাত্রীদের জন্য বিমান বন্দরে র্যাপিড টেস্ট স্থাপনের জন্য আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এটি নিয়ে আমরা গতকালও মিটিং করেছি। ঢাকার পর চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে র্যাপিড টেস্ট স্থাপন করা হবে। আপাতত আমরা এটি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিচ্ছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে র্যাপিড টেস্ট স্থাপনের কাজ শুরু হতে পারে৷
এসি