দূর থেকে দেখে ভ্রম হতে পারে এটি গরু। তবে কাছে গেলেই সেই ভ্রম ভেঙে যাবে। না, এটি গরু নয়; পাঁঠা। গরুর সাইজের বিশালাকার পাঁঠা!
গত কয়েকদিন নগরের বিভিন্ন ভবনের নিচে আলোকসজ্জায় সজ্জিত ছিল বড় বড় সাইজের এসব পাঁঠা। যাদের একনজর দেখতে দিন-রাত ভিড় করেছিল কৌতুহলী মানুষ। এদের মধ্যে দুয়েকটি আবার ভীষণ জেদি। যাদের শিঙের গুঁতোয় আহত হয়েছেন কয়েকজন। তবে মা মনসাকে তুষ্ট করতে ১৮ আগস্ট বিশালাকার এসব পাঁঠাবলির দিন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মনসা পূজা উপলক্ষে কয়েকদিন আগে থেকেই নগরের বিভিন্ন অলিগলি ও ভবনের নিচে জড়ো করা হয় বিভিন্ন সাইজের পাঁঠা ছাগল। যেগুলোর দাম অর্ধলাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত! যদিও বাজারে ছিল সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা দামের পাঁঠাও।
নগরের জামালখান, আসকারদীঘির পাড়, নালাপাড়া, পাথরঘাটা ও ব্যাটারিগলি এলাকায় ছিল দেড় লাখ থেকে শুরু করে চার লাখ টাকা দামের পাঁঠা। যেগুলোর ছিল বাহারি নামও!
ঝুমুর, মালা, বেল্টসহ নানা অলঙ্কারে সাজানো হয় বিশালাকার এসব পাঁঠা। তাদের রাখা হয় আলোকসজ্জিত আলাদা স্টেজে। বড় বড় সাইজের পাঁঠাগুলো দেখতে গত কয়েকদিন ধরে এসব এলাকায় ভিড় ছিল বিভিন্ন এলাকার উৎসুক মানুষের।
নগরের জামালখান সিঁড়ির গোড়া এলাকায় কুমার রাজেন দাশগুপ্তের বাড়ির গ্যারেজে বর্ণিল আলোকসজ্জিত স্টেজে ছিল কোটা জাতের ছাগল ‘রাজাবাবু ও হরিয়ানা প্রজাতির ‘লাল বাদশা’। গত কয়েকদিন ধরে এই ছাগল দুটি এ এলাকাসহ আশপাশের এলাকার আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল। গরু আকারের ছাগল দুটি একবার দেখতে দিন-রাত ভিড় করে অসংখ্য মানুষ। গলায় মালা, পায়ে ঝুমুর আর শরীরে রঙ-বেরঙের বেল্ট পড়ে রাজাবাবু ও লাল বাদশা দৃষ্টি কাড়ে সবার। নগরের কালুরঘাট থেকে ছাগল দুটি কিনেছেন জামালখান এলাকার ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক কুমার রাজেন দাশগুপ্ত।
প্রায় ১৮০ কেজি ওজনের ‘রাজাবাবু’র দাম ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর হরিয়ানা জাতের ‘লাল বাদশা’র দাম ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
রাজেন দাশগুপ্তের ভাগিনা সুকান্ত দত্ত আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমার মামা ছাগল দুটি কালুরঘাট এলাকার মনুবাবুর কাছ থেকে কিনেছেন মনসা পূজার জন্য। প্রতিবছর উনার কাছ থেকেই বড় বড় ছাগল কিনে থাকেন মামা। ‘রাজাবাবু’ ভীষণ উগ্র স্বভাবের। তার আক্রমণে ইতোমধ্যে কয়েকজন আহতও হয়েছেন।
এছাড়া নগরের আসকারদীঘি এলাকায় বড় আকারের হরিয়ানা জাতের ‘শের’ ও তোতাপুরি জাতের ‘চিতা’ কিনেছেন গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক কাজল দেব। তার আসকারদীঘির পাড়ের ড্রিম হাউসের গ্যারেজে আলোকসজ্জিত স্টেজে কয়েকদিন ধরে আলো ছড়িয়েছে ‘শের’ ও ‘চিতা’। তাদের একনজর দেখতে আশপাশের মানুষের আসা-যাওয়া ছিল প্রতিনিয়ত।
জানতে চাইলে কাজল দেবের ছেলে প্রলয় দেব বলেন, হরিয়ানা জাতের ছাগল ‘শের’ এর দাম ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর তোতাপুরি জাতের ছাগল ‘চিতা’র দাম ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ছাগলগুলো আনার পর থেকে প্রতিনিয়ত মানুষের ভিড় লেগে আছে।
এদিকে ব্যাটারিগলি এলাকায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দামের ছাগল কিনেছেন গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালী মন্দিরের নেতা মিহির দে।
১৮ আগস্ট সাতসকালেই নগরের বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে জড়ো করা হবে একের পর এক পাঁঠা। এরপর শুরু হবে পুজো। পুজো শেষে মা মনসাকে সন্তুষ্ট করতে দেওয়া হবে পাঁঠাবলি।
আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম