চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী ও বিচারকের মধ্যে হঠাৎ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় কোর্ট বর্জন করেন বিচারকরা। একই সময় আদালত ভবনে এক বিচারকের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেন আইনজীবীরা। এসব ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে আদালত প্রাঙ্গণ।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, আজ চট্টগ্রাম দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলা করতে আসেন এক ভিকটিম। গত ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ১২৬ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তিনি মামলার আবেদন করেন। এতে অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ২শ থেকে আড়াইশ জনকে।
এদিকে অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে থানায় মামলা নেওয়ার নির্দেশের আবেদন করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত জেলা পিপি আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক। তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকও।
এসময় বিচারক অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করতে চান জানিয়ে আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, বাদীর কাছ থেকে আসামিদের নাম জানতে চান বিচারক। বাদী ১৫ থেকে ২০ জনের নাম বলেন। কিন্তু বিচারক ১২৬ জন অভিযুক্ত সবার নাম জানতে চাওয়ায় বাদী বলেন, অন্যদের নাম মনে আসছে না।
পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বিচারক বলেন, আসামিদের নাম না জানলে মামলা করতে আসছেন কেন? এছাড়া প্রত্যেক আসামির নাম বলতে হবে এবং তারা কে কী করেছে তার বর্ণনা দিতে হবে। অন্যথায় মামলা নেবো না।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম আদালতে ৩৪৬ জনের ‘বড়’ নিয়োগ, পুরনো পদে নতুন মুখ
এদিকে মামলার বিষয়ে আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে বিচারককে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক। এ কথার পর বিচারক মামলা ক্লোজ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক আরও বলেন, আদেশের পর কোর্ট থেকে বেরিয়া যাওয়ার সময় বিচারক আমাকে বলেন, তাঁর কোর্টে জোর খাটানোর চেষ্টা যেন না করি। এ ধরনের মামলা নিয়ে যেন তাঁর কোর্টে না আসি।
এদিকে এ ঘটনার পরপর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম সব বিচারককে এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন। এসময় অন্য কোর্টের বিচারকরাও এজলাস বর্জন করেন।
অন্যদিকে এ ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতি ও সাধারণ আইনজীবীরা বিচারক অলি উল্লাহর অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিচারকের এমন আচরণে তাঁরা ক্ষোভপ্রকাশ করেন। এসময় ওই বিচারকের নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেন কয়েকজন আইনজীবী।
এ ঘটনায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ৩টায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে জানান পিপি আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক।
আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, ওই বিচারকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাঁকে চট্টগ্রাম আদালত থেকে অপসারণের জন্য উচ্চ মহলে জানিয়েছি। এছাড়া আইনজীবীরা ওই বিচারকের প্রতি ক্ষুব্ধ বলেই সবাই প্রতিবাদ করেছে। এছাড়া আগামীকাল (বুধবার) থেকে ওই বিচারকের কোর্ট বর্জনের কর্মসূচি দিয়েছে সমিতি ও সাধারণ আইনজীবীরা
আরএস/আরবি