চট্টগ্রামে মাসের শুরুতেই বেড়েছে আদা-পেঁয়াজের দাম। দেশি শুকনা মরিচের দাম আকাশছোঁয়া! শীত দরজায় কড়া নাড়লেও এখনো কমেনি শীতকালীন সবজির দাম। আগের দামেই চলছে সবজি বেচাকেনা।
নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, কালামিয়া বাজার ও রাহাত্তারপুল কাঁচাবাজারে সরেজমিন দেখা যায়, পেঁয়াজ মান অনুযায়ী কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও প্রতিকেজি ৩২-৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আদা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৬০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০-১২ টাকা, আদার দাম প্রায় ৪০ টাকা!
তবে মাসের শুরুতে স্থিতিশীল রয়েছে রসুনের দর। খুচরা বাজারে এখন রসুনের কেজি ১০৫-১০৭ টাকা।
এদিকে চট্টগ্রামের বাজারে মাসের শুরুতেই এক লাফে ১০০ টাকা বেড়ে গেছে দেশি শুকনা মরিচের দাম! শুকনা লাল মরিচের কেজি এখন ৪৫০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগেও এই দাম ছিল ৩৫০ টাকা।
এছাড়া খুচরা বাজারে মসুর ডাল (মোটা) বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ টাকা। অবশ্য পাইকারি বাজারে এই দাম ৯০-৯২ টাকা। মসুর ডাল (চিকন) প্রতিকেজি ১৪০ টাকা, যা পাইকারি বাজারে ১২৮-১৩০ টাকা। মটর ডাল খুচরা বাজারে ৭০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে এর কেজি ৬৩ টাকা।
শীতের সূচনালগ্নে বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়লেও কমেনি এসব মৌসুমি সবজির দর। চট্টগ্রামের বাজারে গত মাসে বেড়ে যাওয়া সবজির বাজার এ মাসের শুরুতে স্থিতিশীল রয়েছে। ঢেঁড়স ও বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। করলা প্রতিকেজি ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, লাউ ৩৫-৪০ টাকা, মুলা ৫৫-৬০ টাকা, গাজর ১৪০-১৫০ টাকা, আলু ১৮-২২ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা এবং টমেটো ১০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে এসব সবজির দাম।
তবে মাসের শুরুতে কমেছে শিমের দাম। খুচরা বাজারে শিম প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। ৪/৫ দিন আগেও এটি বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকায়।
এছাড়া মাসের শুরুতে কমেছে মুরগির দাম। খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ২৯০ টাকা, যা ৪/৫ দিন আগেও ছিল ৩০০ টাকা।
এদিকে বাড়তি দামের কারণে কঠিন অবস্থায় থাকা সাধারণ ক্রেতারা শীতের সবজির দাম কমার প্রতীক্ষায় ছিল। তবে তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। দাম রয়েছে আগের মতোই।
জসিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পটিয়া-দোহাজারীতে সবজির ভালো ফলন হয়েছে। শীত যেহেতু এসেই গেছে তাই ভেবেছিলাম এবার হয়ত সবজির দামটা একটু কমে আসবে। কিন্তু সবজির দাম তো কমলই না, উল্টো আদা-পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রায় সব সবজির দাম বাড়তি। অথচ ক্ষেতে সবজির ভালো উৎপাদন হয়েছে। তাই সরকারের উচিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এখন অন্তত দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনা।
তিনি বলেন, একদিনের বাজারেই ৫০০ টাকার ওপর খরচ হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকার মুদি দোকানি মো. পারভেজ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা তো পাইকারি এবং খুচরা দুভাবেই মুদি পণ্য বিক্রি করি। তাই আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরণের ক্রেতা আসে। প্রত্যেক ক্রেতাই দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দামের কারণে অসন্তুষ্ট। বাজারে প্রায় সবকিছুর দাম বাড়তি, তাই মানুষ আসলেই খুব কষ্টে আছে। আমাদের কাছে আসা ক্রেতারা প্রতিনিয়তই কষ্টের কথা জানায়। মাত্র ৪/৫ দিনের মধ্যেই হুট করে দেশি শুকনা মরিচের দাম প্রতি কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে গেল, ৫/৬ দিনের মধ্যে আদার দাম বাড়ল কেজিতে ৪০ টাকা। অন্যান্য দ্রব্যের দাম তো আগে থেকে বাড়তি ছিলই।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের চতুর্থ সভা হয়। সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ যে কষ্টে আছে এটা সত্যি। কিন্তু এই কষ্টের জন্য সরকারের চেয়ে বৈশ্বিক কারণ বেশি দায়ী। প্রত্যেক মানুষের জীবনে কখনো ভালো সময় আবার কখনো খারাপ সময় থাকে। সময়টা যে এখন খারাপ যাচ্ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম