চট্টগ্রামের বাজারে ডিম-মুরগির সঙ্গে বাড়তি দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে নতুন মৌসুমের সবজি। শীতের শেষদিকে এসে শীতকালীন সবজির দামও কিছুটা বেড়েছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির বাজারে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে চলতি মাসের শেষদিকে এসে মুদি বাজারে রসুনের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। এছাড়াও ২০-৩০ শতাংশ কমেছে শুকনা মরিচের দাম।
নগরের চকবাজার, বহদ্দারহাট, কালামিয়া বাজার, দেওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাজারে নতুন মৌসুমের সবজি আসতে শুরু করেছে। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়- রবি মৌসুম, খরিপ-১ ও খরিপ-২। শীতের সময়টা রবি মৌসুমের আওতায়। শীতের শেষে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগমন ঘটে খরিপ-১ মৌসুমের।
নগরের কাঁচাবাজারগুলোতে এর মধ্যে খরিপ-১ মৌসুমের সবজি পটল, করলা, ঝিঙা, ঢেঁড়স ও বরবটির সরবরাহ বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের মাঝে নতুন মৌসুমের সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। খুচরা মূল্যে ঝিঙা ও তিতকরলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ টাকা দরে। বরবটি ও পটল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮০ টাকায়। এছাড়া নতুন মৌসুমের আরেক সবজি ঢেঁড়সের কেজি ৯০-১০০ টাকা।
শীতের বিদায়লগ্নে বাজারে কিছুটা কমেছে শীতকালীন সবজির সরবরাহ। এতে কোনো কোনো সবজির দাম কেজিতে প্রায় ৫-১০ টাকা বেড়ে গেছে। রবি মৌসুমের প্রধান সবজি মুলা। চট্টগ্রামের বাজারে অধিকাংশ মুলা উত্তরবঙ্গ থেকে আসলেও মৌসুমের শেষদিকে এসে বাজারে এ অঞ্চলের মুলার সরবরাহ নেই বললেই চলে।
তবে চট্টগ্রামের দোহাজারী এলাকার মুলার সরবরাহ বাজারে থাকলেও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। এ মুলা বর্তমানে নগরের বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০ টাকা দরে। গত সপ্তাহেও মুলা বিক্রি হয়েছিল কেজি ৩০-৩৫ টাকায়।
শীতের অন্যতম জনপ্রিয় দুই সবজি বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০-৩৫ টাকা। গত সপ্তাহে এ দুই সবজি বিক্রি হয়েছিল ২০-২৫ টাকা দরে।
আরেক শীতকালীন সবজি শিম বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে শিমের দাম ছিল কেজি ৩০-৪০ টাকা। এছাড়া টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, বেগুন মান ও জাত অনুযায়ী ৩০-৪০ টাকা, দেশি আলু ৫০ টাকা, মান অনুযায়ী হাইব্রিড আলু ২২-৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৩০-৪০ টাকা এবং লাউ কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে কিছুটা কমেছে কাঁচামরিচের দাম। নগরের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৯০-১০০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে এ মরিচ বিক্রি হয়েছিল কেজি ১১০-১২০ টাকা।
বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. এনাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এখন শীতের মৌসুম শেষ হচ্ছে তাই বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহও কমে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই বাজারে কোনো জিনিসের সরবরাহ কমলে তার দাম বাড়ে। তাই শীতকালীন কিছু সবজির দাম বেড়েছে। সামনে আরো বাড়তে পারে। কিছুদিন পর এসব সবজি আর মিলবে না বাজারে। এর মধ্যে বাজারে নতুন মৌসুমের সবজি এসে গেছে। পটল, ঢেঁড়স, বরবটির মতো নতুন মৌসুমি সবজির সরবরাহ বাজারে বাড়তে শুরু করেছে। তবে বর্তমানে এসব সবজির দাম একটু বেশি। বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেলে সামনে এসব সবজির দাম কমে আসবে।
এদিকে নগরের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা মুদি বাজার ঘুরে দেখা যায়, রসুন পাইকারি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকা, যা খুচরা মূল্যে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকা। গত সপ্তাহে রসুনের পাইকারি দর ছিল ১৯০-১৯৫ টাকা। তখন ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্যে রসুন বিক্রি হয়েছিল ২২০-২৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে রসুনের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।
একইভাবে সপ্তাহের ব্যবধানে শুকনা মরিচের দামও কেজিপ্রতি কমেছে প্রায় ১০০ টাকা। শুকনা মরিচ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩২৫-৩৩৫ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০০ টাকা দরে। গত সপ্তাহেও এ মরিচ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছিল কেজি প্রায় ৫০০ টাকা। তখন এর পাইকারি দর ছিল কেজি ৪৬০-৪৬৫ টাকা।
এদিকে নগরের মুদিবাজারগুলোতে অপরিবর্তিত রয়েছে মসুর ডাল, পেঁয়াজ ও ছোলার দাম। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। পাইকারি বাজারে মসুর ডাল (মোটা) বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮২-৮৮ টাকা, যা খুচরা বাজারে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ৯২-৯৫ টাকা। পাইকারি বাজারে মসুর ডাল (চিকন) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯৫-১০৫ টাকায়, খুচরা বাজারে ১২০ টাকা।
পাইকারি বাজারে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৮-২২ টাকা। খুচরা বাজারে এর দাম ৩০-৩২ টাকা। এছাড়া পাইকারি বাজারে মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪-১৫ টাকা দরে। সাধারণ ক্রেতাদের কাছে মেহেরপুরের এ পেঁয়াজের চাহিদা তেমন না থাকলেও বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে ব্যবহারের জন্য পেঁয়াজের চাহিদা ব্যাপক।
এছাড়া পাইকারি বাজারে ছোলার কেজি ৭৮-৮২ টাকা। খুচরা বাজারে এর দাম ৯০-৯৫ টাকা। তবে আরো উন্নতমানের ছোলার দাম পাইকারি বাজারে ৯০-৯২ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১০০ টাকা।
মুদি ব্যবসায়ী মো. পারভেজ পাভেল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে হুট করে বেড়ে যাওয়া রসুনের দাম এ সপ্তাহে অর্ধেকের বেশি কমে আসায় ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। কয়েকমাস ধরে কয়েক ধাপে বেড়ে যাওয়া শুকনা মরিচের দামও এ সপ্তাহে কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা কমে এসেছে। অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম আপাতত অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে আগামী রমজানকে সামনে রেখে বিভিন্ন মুদি পণ্যের দাম বাড়তে পারে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা রমজানকে সামনে রেখে বিভিন্ন মুদি পণ্য মজুদের মাধ্যমে দেশের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে পারে। সরকারি সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে দুদিনের ব্যবধানে আবারো কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। নগরের বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া লেয়ার মুরগির কেজি ২৭০ টাকা, সোনালী মুরগি ৩২০ টাকা এবং দেশি মুরগির কেজি ৫০০ টাকা।
অন্যদিকে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা পর্যায়ে এখনো আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে ডিমের ডজন ১২০-১৩০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৪ টাকা। নগরের বেশিরভাগ দোকানেই বাড়তি দামেই অর্থাৎ ১২ টাকায় বিক্রি চলছে প্রতিটি ডিম।
দরবার পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবস্থাপক নাহিদুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, টানা বাড়তে থাকা মুরগির দাম কিছুটা কমে দুদিন আগেও বিক্রি করেছিলাম কেজি ২১৫ টাকা। দুদিন পর আজ আবারো কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গেছে। মুরগির দাম আপাতত আর কমবে বলে মনে হচ্ছে না। সামনে দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি আর লেয়ার মুরগির দাম প্রায় কাছাকাছি। তাই মানুষ ইদানিং লেয়ার মুরগি বেশি কিনছে।
এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম