স্ত্রীর সম্পদের লোভে মাদক-অস্ত্র দিয়ে ফাঁসাতে গিয়েছিলেন স্বামী মো. ইউসুফ। এ জন্য ঢাল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আবুল হোসেনকে (৩৯)। মাদক থেকে শুরু করে অস্ত্র— সবকিছু নিজের মজুদ থেকে সরবরাহ করতেন আবুল হোসেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন র্যাবের জালে।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে র্যাব-৭ আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে বুধবার চান্দগাঁও থানায় হস্তান্তর করে বলে নিশ্চিত করেছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান। এ বিষয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে একটি মাদক ও একটি অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার মো. আবুল হোসেন রাঙ্গুনিয়া মরিয়মনগর ইউপি আমিন কোড়ালপাড়া গুড়া মিয়ার বাড়ির মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি বর্তমানে চান্দগাঁও সিএন্ডবি গ্যাস কলোনির পাশে একটি ভবনের চতুর্থ তলার ভাড়া থাকেন।
পলাতক অন্য আসামিরা হলেন- রাঙ্গুনিয়া পশ্চিম মুহরা শেখপাড়া সৈয়দবাড়ীর মৃত মাওলানা আবুল খায়েরের ছেলে মো. ইউসুফ (৬০) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী কোহিনুর (৪০)। তারা চান্দগাঁও দেওয়ান মহসিন সড়ক গোলাপের দোকানের পূর্ব পাশে থাকতেন।
এজহার সূত্রে জানা গেছে, চান্দগাঁও পশ্চিম মোহরা দেওয়ান মহসিন সড়কের গোলাপের দোকানের পূর্ব পাশে নাসরিন আক্তারের ঘরে প্রচুর পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র রয়েছে বলে র্যাবকে জানান আবুল হাসান। তাছাড়া ঘরের কোন কোন স্থানে এসব লুকানো রয়েছে তাও জানানো হয় র্যাবকে। সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৭ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে র্যাব সদস্যরা দরজা নক করলে নাসরিন আক্তারের স্বামী মো. ইউসুফ দরজা খোলেন। নাসরিনের বসতঘরে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যে ইউসুফ কৌশলে পালিয়ে যায়।
আবুল হোসেনের তথ্যমতে, বেডরুমের ফলস ছাদের ওপর ১টি দেশীয় ওয়ান শুটার গান, ১টি দেশীয় লোহার তৈরি ককিং হ্যান্ডেল যুক্ত পাইপ গান, ১টি কার্তুজসহ ওয়্যারড্রপের ড্রয়ারে ২ হাজার ২৫০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।
এ সময় নাসরিন জানান, এসব বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তাছাড়া উপস্থিত স্থানীয় লোকজন জানান, নাসরিন আক্তার সহজ-সরল মহিলা এবং তার স্বভাব-চরিত্রও ভালো।
এ ঘটনায় র্যাবের সন্দেহ হয় আবুল হোসেনের ওপর। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, এ জমি নাসরিন আক্তার ও তার ছেলে মো সোহানের (১৮) নামে। নাসরিনের সঙ্গে স্বামী ইউসূফ ও সতীন কোহিনূরের সঙ্গে জমি-জমা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল। বিরোধের জেরে নাসরিন ও তার ছেলেকে ফাঁসানোর জন্য তারা তিনজন মিলে এ পরিকল্পনা সাজান।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নাসরিন ও তার ছেলে ঘরে না থাকা অবস্থায় গত সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইউসূফকে সঙ্গে নিয়ে এসব অস্ত্র, গুলি এবং ইয়াবা ঘরে রেখে আসে তারা। র্যাবের অভিযান শেষ হলে এ বাবদ কোাহিনূর ও ইউসূফ ৩ লাখ টাকা দেবেন বলে জানান আবুল হোসেনকে।
এ সময় ইউসূফ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী কোহিনূর আক্তার পালিয়ে যাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আবুল হোসেন চান্দগাঁও মোহরা এলাকার চাঁদাবাজদের সরদার। কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় অটোরিকশা থেকে প্রতি টোকেন বাবদ ৬০০ টাকা এবং প্রতিদিন রাঙ্গুনিয়া থেকে রাউজান আসা-যাওয়া প্রতিটি অটোরিকশা থেকে ১০ টাকা করে চাঁদা নেন তিনি। তার নেতৃত্বে রয়েছে বেশকিছু কথিত সাংবাদিকও।
জানা গেছে, ডি দিদার, সাংবাদিক হান্নান, রিপন ভদ্রসহ কথিত আরও অনেক অনলাইন সাংবাদিক তার এসব কাজে মদদ দেন।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।