চট্টগ্রামে করোনার টিকার ‘ওয়েটিং লিস্ট’ মজুদের দ্বিগুণ, ‘ক্ষুদে বার্তা’ নিয়ে ক্ষোভ

চট্টগ্রামে করোনার টিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে টিকার নিবন্ধনও। তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে এখন টিকার মজুদের প্রায় দ্বিগুণ মানুষ আছেন ওয়েটিং লিস্টে (অপেক্ষমাণ তালিকায়)।

এদিকে নিবন্ধনের পর বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও ক্ষুদে বার্তা পাননি অনেকে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভ। সেই ক্ষোভের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে।

জানা যায়, বয়সসীমা কমিয়ে আনার পর থেকে এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কারণে নিবন্ধন বেড়েছে বহুগুণে। অথচ শুরুর দিকে টিকা নেওয়ার আগ্রহ ছিল খুবই কম। এ নিয়ে ছিল ভয়-ভীতি ও নানা শঙ্কা। তবে সব শঙ্কাকে পেছনে ফেলে করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মানুষ এখন টিকার দিকেই ঝুঁকছে বেশি— এমনটা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

তরুণ জনগোষ্ঠীকে সুযোগ দেওয়ার পর থেকে বাড়তে শুরু করে করোনার টিকার নিবন্ধন। এ বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রথম টিকার নিবন্ধন শুরুতে বলা হয়েছিল ৫৫ বছরের বেশি বয়সী এবং নানা পেশার সম্মুখসারির কর্মীরা আগে নিবন্ধনের সুযোগ ও টিকা পাবেন। এরপর ক্রমান্বয়ে বয়সসীমা কমতে থাকে। বিভিন্ন সময় বয়সসীমা কমিয়ে ৪০, ৩৫, ৩০ ও ২৫ বছর করা হয়।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রোববার (৮ আগস্ট) পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রায় ২১ লাখ মানুষ করোনার টিকার নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। টিকার অপেক্ষায় আছেন আরও ৬ লাখ মানুষ।

চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মডার্নার ৩৮ হাজার, এক লাখের বেশি সিনোফার্মা এবং এক লাখের বেশি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা মজুদ আছে। সবমিলিয়ে টিকার মজুদের চেয়ে অপেক্ষমান মানুষের সংখ্যা এখন অনেক বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ পূর্বের চেয়ে অনেকাংশে বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়ছে। ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তায় কিছু নেই। কিছুদিন পরপরই আমাদের কাছে ভ্যাকসিন আসছে। যতক্ষণ টিকার সরবরাহ পাব ততক্ষণ চালিয়ে যাব।

জানা গেছে, কেউ করোনার টিকার প্রথম ডোজের জন্য অপেক্ষা করছেন, কেউ অপেক্ষা করছেন দ্বিতীয় ডোজের জন্য। আবার কেউ নিবন্ধন করেছেন দু’সপ্তাহ আগে, কিন্তু এখনও ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) পাননি।

নগরের চান্দগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. হাসান টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন গত ১৪ জুলাই। ২৬ দিন পার হয়েছে, রোববার বিকেল পর্যন্ত তিনি জানতে পারেননি কবে টিকা পাবেন। তাঁর মুঠোফোনে কোনো ক্ষুদে বার্তা এখনও আসেনি।

টিকার নিবন্ধন করে ক্ষুদে বার্তা না পাওয়া এরকম উদাহরণ শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারাদেশে রয়েছে। এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন: শনাক্তের নতুন চূড়ায় চট্টগ্রামের করোনা, মৃত্যুতে এবার নগর ছাড়িয়ে উপজেলা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৈনিক টিকাদানের সক্ষমতার তুলনায় নিবন্ধন বেশি হওয়ায় নিবন্ধনকারী অনেকের কাছে ক্ষুদে বার্তা পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, নিবন্ধনের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন টিকার চেয়ে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা বেশি। তবে চিন্তার কিছু নেই। সবার কাছেই ক্ষুদে বার্তা যাবে। এজন্য ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে রোববার (৮ আগস্ট) থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকা। এদিন নগর ও উপজেলায় ৪ হাজার ৮২৩ জনকে টিকা দেওয়া হয়। এর আগে চট্টগ্রামে শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সুরক্ষা অ্যাপে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২ কোটি ৪৯ লাখ ৮১ হাজার ২৭ জন করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। দেশের ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩ হাজার ৬২৮ জন মানুষ করোনার টিকার আওতায় এসেছে। এদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৪ লাখ ৭ হাজার ৮৩৭ এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯১ জন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত কিছুদিনে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন ‘কঠোর’ বিধিনিষেধ চলছে।

সোমবার (৯ আগস্ট) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ২ হাজার ৩৭১ নমুনা পরীক্ষায় ৫০৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৪ জন নগরের এবং ১৩৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

একইসময়ে মারা গেছেন ১৩ জন করোনা রোগী। এরমধ্যে নগরের ৫ জন ও উপজেলার ৮ জন।

চট্টগ্রামে এ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭২ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের মোট ৯১ হাজার ২৮ নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!