আজ (২২ অক্টোবর) মহাষ্টমী পূজা। মহাষ্টমীর প্রধান আকর্ষণ ‘কুমারী পূজা’। প্রতিবছরের মতো এবারও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে নানা আয়োজনে পাথরঘাটা রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারী পূজা।
এবার কুমারী পূজার আসন অলংকৃত করেন ৬ নামে ১১ কুমারী। এদের মধ্যে ভৈরবী নামে পূজিত হয়েছেন ১২ বছরের পূজা দাশ, রুদ্রাণী নামে ১১ বছরের অস্মিতা সেন, কালসন্দর্ভা নামে ৯ বছরের সুভদ্রা বিশ্বাস, মালিনী নামে ৭ বছরের নিভৃতি দত্ত, তিথি দাশ, আদ্রিতা বিশ্বাস ও আদ্রিতা চৌধুরী, কুব্জিকা নামে ৮ বছরের পৌষালী রায় ও প্রীত ধর, অপরাজিতা নামে কৃত্তিকা চৌধুরী এবং কালসন্দর্ভ নামে আনমোল বণিক।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় নগরের পাথরঘাটা রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃ মন্দিরে এই কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। এতে পৌরহিত্য করেন শ্রীমৎ শ্যামানন্দ দাস মোহন্ত মহারাজ।
পূজারী ছিলেন বৈষ্ণব রুবেল দাস, তন্ত্রধারক দেবব্রত নাথ এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বৈষ্ণব বলরাম দাস, রঘু দাস, নিমাই দাস ও সীতানাথ দাস।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে আকর্ষণের কেন্দ্রে কুমারী পূজা
কুমারী পূজা সম্পর্কে শ্রীমৎ শ্যামানন্দ দাশ মোহন্ত মহারাজ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মাতৃরূপে ঈশ্বরের একটি আরাধনা কুমারী পূজা। কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দুর্গার আরেক নাম কুমারী। কুমারীরা শুদ্ধতার প্রতীক হওয়ায় মাতৃরূপে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য কুমারী কন্যাকে নির্বাচিত করা হয়। মূলত নারীর যথাযথ মর্যাদা অধিষ্ঠিত করতে কুমারী পূজা করা হয়। কুমারী প্রতীকে জগৎজননীর পূজায় পরম সৌভাগ্য লাভ হয়।
এদিকে কুমারী পূজা উপলক্ষে আজ ভোর থেকেই মন্দিরে ভক্তের ঢল নামে। কুমারী মাকে কাছ থেকে দেখতে এবং মায়ের কৃপা লাভে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন নানা বয়সের নারী-পুরুষ।
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে মহাষ্টমীর দিন মানবকল্যাণের জন্য ১ থেকে ১৬ বছরের কুমারী কন্যাকে মনোনীত করা হয়। এদিন দেবী দুর্গার অপর কোনো নামে কুমারীর নামকরণ করা হয়।
বয়স ভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয় রুদ্রাণী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে।
জানা যায়, কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ১৬টি উপকরণ দিয়ে। অগ্নি, জল, বস্তু, পুষ্প ও বাতাস-এ পাঁচটি উপকরণ দিয়ে কুমারীকে পূজা করা হয়। পূজার আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে পরানো হয় নতুন কাপড় । মাথা ও গলায় পরানো হয় ফুলের মালা ও অলংকার। প্রসাধনের নিপুণ সাজে সাজিয়ে তোলা হয় কুমারীকে। এরপরই কুমারীকে মন্ত্র পাঠ করে গঙ্গাজল ছিটিয়ে শরীর-মন শুদ্ধ করে মাতৃজ্ঞানরূপে পূজা করা হয়। পূজা শেষে ভক্তরা কুমারী মায়ের উদ্দেশে মিষ্টি, ফল, ফুল, দধি ইত্যাদি নিবেদন করবেন।
প্রসঙ্গত, গতবছর ৭ বছরের বালিকার শাস্ত্রীয় নাম হয় ‘মালিনী’। শাস্ত্রমতে, ‘মালিনী’ নামে কুমারী পূজিত হলে ধৈনশ্বর্য লাভ হয়। আগের বছর ৬ বছরের বালিকা ‘উমা’ নামে পূজিত হয়েছিল। শাস্ত্রমতে ‘উমা’ নামে কুমারী পূজা হলে ‘শত্রুনাশ’ হয়। ২০০৪ সাল থেকে পাথরঘাটা শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজা হয়ে আসছে।
আলোকিত চট্টগ্রাম