শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমীর দিন অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। মাতৃরূপে ঈশ্বরের একটি আরাধনাই হচ্ছে কুমারী পূজা। তবে সব মণ্ডপে এই পূজার আয়োজন করা হয় না।
আয়োজকদের মতে, মাতৃরূপে ঈশ্বরের একটি আরাধনা কুমারী পূজা। কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দুর্গার আরেক নাম কুমারী। কুমারীরা শুদ্ধতার প্রতীক হওয়ায় মাতৃরূপে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য কুমারী কন্যাকে নির্বাচিত করা হয়। মূলত নারীর যথাযথ মর্যাদা অধিষ্ঠিত করতে কুমারী পূজা করা হয়। কুমারী প্রতীকে জগৎজননীর পূজায় পরম সৌভাগ্য লাভ হয়।
শাস্ত্রানুসারে, মহাষ্টমীর দিন মানবকল্যাণে ১ থেকে ১৬ বছরের কুমারী কন্যাকে মনোনীত করা হয়। বয়সভেদে নাম হয় ভিন্ন। এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয় রুদ্রাণী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে আকর্ষণের কেন্দ্রে কুমারী পূজা
জানা যায়, কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ১৬টি উপকরণ দিয়ে। অগ্নি, জল, বস্তু, পুষ্প ও বাতাস-এ পাঁচটি উপকরণ দিয়ে কুমারীকে পূজা করা হয়। পূজার আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে পরানো হয় নতুন কাপড়। মাথা ও গলায় পরানো হয় ফুলের মালা ও অলংকার। প্রসাধনের নিপুণ সাজে সাজিয়ে তোলা হয় কুমারীকে। এরপরই কুমারীকে মন্ত্র পাঠ করে গঙ্গাজল ছিটিয়ে শরীর-মন শুদ্ধ করে মাতৃজ্ঞানরূপে পূজা করা হয়। পূজা শেষে ভক্তরা কুমারী মায়ের উদ্দেশে মিষ্টি, ফল, দধি ইত্যাদি নিবেদন করেন।
২০০৪ সাল থেকে চট্টগ্রামে নগরের পাথরঘাটা হরেশচন্দ্র মুন্সেফ লেইন এলাকার শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারও এই পূজার আয়োজন করা হয়েছে মন্দিরে। তবে এবার বৃহৎ নয়, সীমিত পরিসরে হবে।
গতবছর কুমারী পূজার আসন অলংকৃত করেন ৬ নামে ১১ কুমারী। এদের মধ্যে ভৈরবী নামে পূজিত হন ১২ বছরের পূজা দাশ, রুদ্রাণী নামে ১১ বছরের অস্মিতা সেন, কালসন্দর্ভা নামে ৯ বছরের সুভদ্রা বিশ্বাস, মালিনী নামে ৭ বছরের নিভৃতি দত্ত, তিথি দাশ, আদ্রিতা বিশ্বাস ও আদ্রিতা চৌধুরী, কুব্জিকা নামে ৮ বছরের পৌষালী রায় ও প্রীত ধর, অপরাজিতা নামে কৃত্তিকা চৌধুরী এবং কালসন্দর্ভ নামে আনমোল বণিক। তবে এবার ৪-৫ কুমারী পূজিত হবেন।
২০২২ সালে এই মন্দিরে কুমারী পূজার আসন অলংকৃত করেন ৭ বছরের প্রীতি ধর। ৭ বছর হওয়ায় এবার তাঁর শাস্ত্রীয় নাম ‘মালিনী’।
২০২১ সালে কুমারী পূজার আসন অলংকৃত করেন ৬ বছরের প্রীতি ধর। তাঁর শাস্ত্রীয় নাম হয় ‘উমা’।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে এবার পুজোর আসনে ৬ নামের ১১ কুমারী
এ বিষয়ে শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরের মহারাজ বলরাম দাস আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গতবারের চেয়ে বড় পরিসরে করার চিন্তা থাকলেও অবস্থাদৃষ্টে এবার সীমিত পরিসরে ৪-৫ জন কুমারী রূপে পূজা করা হবে।
এদিকে নগরের শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির ছাড়াও রাজাপুর লেইন শ্রীশ্রী পঞ্চমাতা বিগ্রহ মন্দিরেও গতবছর পূজার আয়োজন করা হয়। এবছর কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান পঞ্চমাতা বিগ্রহ মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রেমময়ানন্দ ব্রহ্মচারী।
শ্রীমৎ প্রেমময়ানন্দ ব্রহ্মচারী বলেন, গতবারের মতো এবারও মন্দিরে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এবার চট্টগ্রাম নগরের ১৬ থানায় ২৯২ মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।
আলোকিত চট্টগ্রাম