নগরের পরীর পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচটি বহুতল ভবনসহ সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে জরুরিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব, আইন ও বিচার বিভাগকে নির্দেশনা দেন তিনি।
সোমবার ( ১৮ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব সাইফুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ ৭১টি আদালতের অবস্থান চট্টগ্রাম জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পরীর পাহাড়ে। এটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভূক্ত ১১ দশমিক ৭২ একর পাহাড়-টিলা শ্রেণির জমির ওপর। বর্তমানে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়টি ১৮৯২-৯৪ সালে নির্মিত। এছাড়া এখানে তিনটি বহুতল ভবনে বিচার বিভাগের ৭১টি আদালত রয়েছে। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের সময়ে ১৯৭৭ সালে মাত্র ০.১২৯০ একর তথা ১২ দশমিক ৯০ শতক জমি লীজ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি দেশের সংশ্লিষ্ট সব আইনকানুন ও বিধি বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেখানে ১ দশমিক ৭৯ একর সরকারি খাস জমি জবরদখল করে। গত ২০ বছরে এখানে একের পর এক ১১-১২ তলার ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়। এসব ভবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরো দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা।
বর্তমানে পরীর পাহাড়ে অপরিকল্পিত ও অতিরিক্ত অবৈধ স্থাপনার কারণে পাহাড় ধ্বস, ভুমিধ্বস, অগ্নিঝুঁকি, নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য ২০২১ সালের আগস্টে দ্বিতীয় পক্ষের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের আলোকে প্রধানমন্ত্রী পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বিচারে গাছ কেটে অনুমোদনবিহীন একটি বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আইনজীবী সমিতি ওয়াসা, জেলা প্রশাসনের আপত্তি ও বাধাকে উপেক্ষা করে মাটি ও গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। এ কারণে জুন মাসে পরীর পাহাড়ে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দেয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলী পাহাড় ধসের স্থান পরিদর্শন করে ধসরোধে দ্রুত রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের তাগিদ দেন।
পরীর পাহাড়ে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, বিচার বিভাগের ৩টি ভবন, পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ব্যাংক, জেলা ও সাব রেজিস্টার অফিস, সিডিএ ভবন, নিউমার্কেট ও জহুর হকার মার্কেটে পাহাড় ধসে ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে। আইনজীবী সমিতির ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন ও এর আশপাশের অবৈধ স্থাপনার কারণে এ পাহাড়ে উঠানামার একমুখী রাস্তাটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। কোনো ভারী যানবাহন ও ফায়ার সার্ভিসের কোনো মাঝারি আকৃতির গাড়ি এখানে ঢুকতে পারে না। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন।