সন্ধ্যা ৬টা, নগরের গুরুত্বপূর্ণ মুরাদপুর মোড়। অফিস ছুটির এ সময়টাতে যাত্রীর চাপটাও থাকে বেশি। ঠিক সেই মুহূর্তে রাস্তা দখল করে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে তিনটি বাস। এতে পেছনে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। কিন্তু বাসের চালক-হেলপারদের সেদিকে তাকানোর সময় নেই।
নগরের গুরুত্বপূর্ণ মুরাদপুর মোড়ের প্রতিদিনের চিত্র এটি। শুধু বাস নয়, এভাবে প্রতিদিন রাস্তার মাঝে যাত্রী উঠা-নামা করায় হিউমান হলারগুলোও। রাস্তার মাঝে হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করানোয় দেখা দিচ্ছে যানজট।
মুরাদপুরের মতো নগরের ব্যস্ততম সব রাস্তার মোড়েই এখন এমন হাল। রাস্তার মাঝে গাড়ি থামিয়ে এসব মোড়েও চলে যাত্রী উঠা-নামা। এতে যানজটে পড়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। আবার শ্রমঘণ্টাও নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে রাস্তার যানজট নিরসন যাদের দায়িত্ব সেই ট্রাফিক পুলিশের অনেকেই ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না। রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লেও তা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। আবার কিছু ট্রাফিক পুলিশ হাতের ইশারা গাড়ি চলে যেতে বললেও অনেক চালক সেটি দেখেও না দেখার ভান করেন। গাড়ি ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়েই যাত্রী উঠান চালক-হেলপাররা।
একইভাবে নগরের ব্যস্ততম রাস্তার মোড়ে চলে রিকশা-অটোরিকশার রাজত্ব। নিজেদের খেয়াল-খুশিতোই তারা গাড়ি পার্কিং করে যত্রতত্র। তাদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে মোটরসাইকেল। রাস্তা থেকে শুরু করে ফুটপাত, সুযোগ পেলে সবখানেই পার্কিং করা হয় মোটরসাইকেল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরের বিভিন্ন ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে মোড়ে রয়েছে হকার। নানা রকমের পসরা সাজিয়ে তারা বসে আছে রাস্তায়! কেউ আমড়া বিক্রি করছে, তো কেউ শরবত। সন্ধ্যার পর অনেক হকারকে দেখা যায় রাস্তার ধারে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বিরিয়ানি-কাবাবও বিক্রি করতে! এসব কারণে নগরের প্রতিটি মোড়ে বেড়েছে যানজট।
বিশেষ করে নগরের অক্সিজেন, মুরাদপুর, ২ নং গেট, বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, প্রবর্তক, কাজির দেউরি, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বাহির সিগন্যাল, বহাদ্দারহাট, চকবাজার, লালখানবাজর, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, বাদামতল, আগ্রাবাদ, কাটগড়, ইপিজেড, স্টিলমিল, সিমেন্ট ক্রসিংসহ বিভিন্ন মোড়ে সকাল-সন্ধ্যা যানজট লেগে থাকে। মোড়ের এ যানজটে আটকা পড়ে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হয় অসংখ্য মানুষকে।
সচেতন মহল বলছে, যানজট নিরসনে মোড়ে পার্কিং নিষিদ্ধ করতে হবে। মোড় থেকে অন্তত ২০-৩০ গজ দূরে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। একইসঙ্গে ব্যস্ততম রাস্তার মোড় করতে হবে হকারমুক্ত। আবার যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। কারণ যাত্রীরা মোড় থেকেই গাড়িতে উঠতে অভ্যস্ত। তাদের একটু হেঁটে গাড়িতে উঠার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
আগ্রাবাদ মোড়ে বাস নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন চালক আবদুল করিম। ব্যস্ততম এ মোড়ে যাত্রী উঠা-নামায় যানজট ও ভোগান্তির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা এগুলো জানি, কিন্তু যাত্রী উঠা-নামার জন্য মানতে পারি না। মোড় থেকে সামান্য দূরে দাঁড়ালে যাত্রী উঠে না, তাই মোড়ে দাঁড়াই।
হাবিবুল বাশার নামে এক যাত্রী বলেন, মোড় থেকে বাসে উঠার মানসিকতা বদলাতে হবে। এতে যানজট কমলে এর সুফল আমরা যাত্রীরাই পাব। তাছাড়া এ ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের মাঠপর্যায়ে নিয়মিত প্রচারণা চালানো দরকার। কিন্তু ট্রাফিক বিভাগের তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) আসম মাহতাবউদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মোড়ভিত্তিক যানজট দূর করার জন্য আমরা নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী উঠা-নামার পদক্ষেপ নিয়েছি। কোনো গণপরিবহন নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া অন্য কোথাও যাত্রী উঠা-নামা করতে পারবে না। আপনারা শিগগির এর সুফল পাবেন।
এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম