নগরে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। সেই সঙ্গে বাড়ছে অপরাধ। তুচ্ছ ঘটনায় ঘটছে খুনের মতো ঘটনা। কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে জনমনে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখী তৎপরতার পরও থামছে না কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য।
এদিকে নগরে গত ১৫ এপ্রিল পাহাড়তলীতে ও ২২ এপ্রিল চেরাগী পাহাড় এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নৃশংসতার বলী হয়েছে দুই কিশোর।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে উত্তর ও দক্ষিণ জোনের ৮ থানায় কিশোরদের ১৭৮টি আড্ডার স্থান চিহ্নিত করা হয়েছিল। এরপর সেসব স্থানে বাড়ানো হয়েছিল নজরদারি। কিন্তু সেই কার্যক্রম বেশিদিন আর অব্যাহত থাকেনি। বর্তমানে আড্ডার স্থানগুলো নজরদারি বাইরে।
চট্টগ্রামের মিডিয়া ও সাংস্কৃতিকপাড়া হিসেবে খ্যাত চেরাগী পাহাড় এলাকায়ও বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। সশস্ত্র কিশোর গ্যাং দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো এলাকা। তুচ্ছ ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে মারামারি, খুন-খারাবিতে। তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে এলাকার সাধারণ মানুষ রয়েছেন আতঙ্কে।
আরও পড়ুন: শৈবালের কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিতে জামালখানে ছাত্রলীগ নেতা খুন, মামলায় আসামি ২০
গত ২২ এপ্রিল (শুক্রবার) রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার দক্ষিণের কার্যালয়ের মাত্র বিশ গজ দূরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নির্মমভাবে খুন হন বিএফে শাহীন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আসকার বিন তারেক (ইভান)। সেও আরেক কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য ছিল। এ ঘটনার পর শোভন দেব (১৭) নামের এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। মামলার আসামি করা হয় ২০ জনকে।
এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) পাহাড়তলী এলাকায় মেলায় ঘুরাঘুরির সময় তর্কের জেরে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হন ১৪ বছর বয়সী কিশোর ফাহিম। তাকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে কিশোর সজল। এ ঘটনায় সজলসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরের জামালখান, চেরাগী পাহাড়, সিঁড়ির গোড়া, আন্দরকিল্লাসহ আশপাশের এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপের সদস্যরা এলাকার বিভিন্ন দোকান ও ফুটপাত থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজিতে জড়িত। তাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দা ও দোকানদাররা। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের একটি অংশ জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের অনুসারী। তাঁর বাসার সামনে সবসময় বসে কিশোর-তরুণদের আড্ডা। এছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের আরেকটি অংশ নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সাব্বির সাদিকের অনুসারী। এই দুই অনুসারী কিশোর গ্যাং সদস্যদের মধ্যে বিরোধেই খুনের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: দাপিয়ে বেড়ানো কিশোর গ্যাং ‘টেনশন গ্রুপের’ ৯ কিশোর র্যাবের জালে
স্থানীয়রা জানান, হেলদি ওয়ার্ড জামালখানে সন্ধ্যা হলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। চেরাগীর অলি-গলিতে জমিয়ে তুলে আড্ডা। কথায় কথায় মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এখন এখানে প্রতিদিনের ঘটনা। এমনকি খুনোখুনিতেও জড়িয়ে পড়ে তারা।
এদিকে জামালখানে এলাকার মতো পাহাড়তলীতে সশস্ত্র কিশোর গ্যাং দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলছেন, কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারদের যদি দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হয় তাহলে খুনোখুনির ঘটনা দিন দিন আরও বাড়বে।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে এসব খোঁজখবর রাখার ব্যাপারে অভিভাবকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হলে কিশোর অপরাধ অনেকেটাই রোধ করা সম্ভব।
আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, মাদক, ভার্চুয়াল জগতে আসক্ত ও কথিত বড় ভাইদের আশ্রয়-পশ্রয়ে কিশোররা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কিশোর বয়সের অপরিপক্কতাকে কাজে লাগিয়ে যারা তাদের খুনী বানাচ্ছে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দুটি খুনের ঘটনার প্রেক্ষাপট আলাদা। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু দুটি খুনের ঘটনা কিশোরদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে তাই কারণগুলো খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।