চকরিয়ায় বন্যা—খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, ক্ষতবিক্ষত সড়ক

চকরিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শুক্রবার থেকে মাতামুহুরী নদীর পানি কমতে থাকায় আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বানের পানি কমছে। এর ফলে পানিবন্দি লাখো মানুষের দুর্ভোগও কিছুটা কমেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ও রাস্তার পাশে ঠাঁই নেওয়া লোকজনেরা ফিরতে শুরু করেছেন নিজ বাড়িতে। তবে পানি কমলেও এখনো রয়ে গেছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাবারের সংকট।

এদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কগুলো যান চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সড়কে ভেসে উঠেছে বড় বড় ক্ষত চিহ্ন। বন্যা কবলিত দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বরসহ পানিবাহিত নানা রোগ।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, খুটাখালী ও পৌরসভা থেকে পানি অনেকাংশে নেমে গেছে। কিছু কিছু সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে আছে। ফলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এছাড়া উপজেলার সাহারবিল, পূর্ব-বড়ভেওলা, বিএমচর, কোনাখালী, পশ্চিম-বড়ভেওলা, ঢেমুশিয়া এলাকায় পানি ধীরে ধীরে কমছে।

স্থানীয়রা জানান, পানিতে ঢুবে থাকা নলকূপ থেকে আর পানি উঠছে না। বিশুদ্ধ পানির সংকটে নানা রোগে ভুগছেন তারা।

স্বামী-সন্তান নিয়ে সড়কের পাশে টাঙানো পলিথিনে আশ্রয় নেওয়া প্রবীণ মরিয়ম বেগম জানান, পাঁচদিন ধরে তারা অবস্থান করছেন এই জায়গায়। প্রতিদিনই শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেছেন কোনোরকম। এখন বাড়িফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল করিম জানান, বন্যায় চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়ন ছাড়াও ১টি পৌরসভার সবকটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। বানবাসি মানুষেরা খুবই কষ্টে আছেন। সরকারিভাবে ও বেসরকারি উদ্যোগে যেসব ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায়  অপ্রতুল। ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, বন্যাদুর্গত এলাকায় কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম, উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, চেয়ারম্যান আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী, মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি শুকনো খাবার, চাল-ঢাল, খিচুড়ি বিতরণ করছেন।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে হিসাব করেই ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে। ঘর হারানো পরিবার ও ভেঙে যাওয়া সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ সচল করার কাজ অগ্রধিকার দেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য ৪ টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরও ২৮ টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে ’

অপরদিকে বন্যাদুর্গত মানুষের চিকিৎসা সহায়তায় চকরিয়ার উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে থেকেও বিশেষ ব্যবস্থায় দুর্গতদের দেয়া হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য কর্মকর্তা পলাশ সুশীল বলেন, ‘উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার জন্য ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক টিমে একজন করে মেডিকেল অফিসার কাজ করছেন।’

মুকুল/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!