রাত পোহালেই চকবাজারের ভোট। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মৃত্যুতে শূন্য ঘোষণা হওয়া এখানে কাউন্সিলর নির্বাচনে লড়ছেন ২১ প্রার্থী!
এদিকে এ নির্বাচনে ২১ প্রার্থীর মধ্যে দুয়েকজন ছাড়া সবাই অপরিচিত মুখ। এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, অনলাইনে জুয়ার টাকা কামানোর। রেস্টুরেন্ট ব্যবসার আড়ালে অনলাইন জুয়া খেলে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধ আয়ের অভিযোগ ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের। আবার শীর্ষ সন্ত্রাসী টিনুও প্রার্থী হয়েছেন চকবাজার ওয়ার্ডের নির্বাচনে!
সূত্র বলছে, টিনুর সমর্থকরা ছক কষছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার দুটি কেন্দ্র দখলে। গোয়াছিবাগান এলাকায়ও টিনুর বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে।
আরও পড়ুন: চকবাজারের ‘অস্ত্রবাজ’ টিটুর হঠাৎ ‘সন্ত্রাসী’ টিনু হওয়ার গল্প
আবার চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে ‘বড় ভাই’ খ্যাত এক প্রার্থীকে জিতিয়ে নিতে ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাপাসগোলা কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনার ছকও ইতোমধ্যে এঁকেছেন তিনি। খোদ কয়েকজন প্রার্থী করেছেন এ অভিযোগ।
এই প্রার্থীদের অভিযোগ, কাপাসগোলা স্কুল কেন্দ্র সকাল থেকে দখলে রাখতে মরিয়া ওই নেতা। তিনি দিন-রাত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কিশোর গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে। নির্বাচনি প্রচারণার দিন গতকাল মঙ্গলবার রাতেই শেষ হলেও এখনো ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠছে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। আগামীকালের নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে তিনি বাকলিয়া থেকেও জড়ো করছেন ছাত্রলীগ নামধারী একাধিক সন্ত্রাসীকে।
এবারের নির্বাচনের ২১ প্রার্থীর মধ্যে দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ ছাড়া বলতে গেলে সবাই নতুন মুখ। দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ গতবারের নির্বাচনে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। তিনি এবার ২১ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন বলে মনে করেন চকবাজার ওয়ার্ডের ভোটাররা।
জামায়াত-শিবিরের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের নির্বাচনি লড়াই মূলত জমে উঠেছে দেলোয়ার হোসেন ফরহাদকে ঘিরে। আওয়ামী লীগ কাউকে দলের মনোনয়ন না দেওয়ায় এবার সেখানে শক্ত প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ এবার ফরহাদের পক্ষে কাজ করছেন।
চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মোশারফ হোসেনের সন্তান দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ। নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যও তিনি। চকবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় চরম মূল্য দিতে হয়েছে এই পরিবারটিকে।
আরও পড়ুন: দখলের পেটে ফুটপাত—চকবাজারে যানজট, কষ্টের শেষ নেই মানুষের
১৯৮৯ সালে ফরহাদের বড় ভাই মো. ইউসুফকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করে শিবিরের সন্ত্রাসীরা। ওই হত্যাকাণ্ড এতটাই আলোচিত ছিল যে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শোকাহত ফরহাদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছিলেন তাদের বাসায়।

ফরহাদের আরেক ভাই জাকির হোসেন ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। অন্য ভাই একরাম হোসেন নগর যুবলীগের সদস্য এবং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তাদের ওপরও বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।
চকবাজারে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় বাবা ও ভাইয়ের যে ত্যাগ-সংগ্রাম তার চূড়ান্ত বিজয়ের জন্যই কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন জানিয়ে দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এখানকার ইতিহাস সবাই জানে। চকবাজার থেকে বলতে গেলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের যাবতীয় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত জামায়াত-শিবির। সেই জায়গায় দলের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আমরা চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমার আব্বার চেম্বার অন্তত ৮-১০ বার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আজ জামায়াত-শিবির রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হলেও এই ওয়ার্ডে এখনও আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়নি।
আলোকিত চট্টগ্রাম