গাইডওয়ালের নিচে ঢালাই, ওপরে ফাঁকা—সিমেন্টের সঙ্গে মাটি!

বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ

কক্সবাজারের পেকুয়ায় সাবমেরিন বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটির একতা বাজার সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজে ঢালাইসহ ব্যাপক অনিয়ম ও ত্রুটির অভিযোগ উঠেছে। সড়কের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের গোঁয়াখালী এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তার উত্তর পাশে নির্মাণাধীন গাইডওয়ালের নিচের অংশ ফাঁকা রেখে ওপরে কনক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে গাইডওয়ালের ফাঁকা অংশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে মাটি ভরাট করে দেওয়া হয়।

এদিকে পহরচাঁদা এলাকায় সড়কের কার্পেটিংয়ের বেড তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইটের খোঁয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একতাবাজার থেকে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬১ কোটি টাকা।

চকরিয়ার বরইতলী একতাবাজার থেকে মগনামা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ককে ১০ দশমিক ৩ পয়েন্টে উন্নীত করা হবে। তিন প্যাকেজে সড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন : হঠাৎ নত সিডিএ—চকবাজার টু বহদ্দারহাট সড়ক দাবিয়ে বুক ফুলিয়ে বানাচ্ছে হাইরাইজ বিল্ডিং

ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স, জামিল ইকবাল, রানা বিল্ডার্স ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স নামে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নির্মাণকাজ করছে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের একতাবাজার-পহরচাঁদা-মগনামাঘাঁট-বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি জেলা মহাসড়কটির প্রথম প্যাকেজের ১ দশমিক ৯১ লাখ ঘনমিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, দশমিক ৪ কি.মি বাঁক সরলীকরণ, ৬ দশমিক ৫৪ কি.মি পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণ ও প্রশস্তকরণ, ৫ দশমিক ৭৬ কি.মি পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণ, প্রশস্তকরণ ও উঁচুকরণ, দশমিক ৭০ কি.মি রিজিভ পেভমেন্ট, আরসিসি বক্স কালভার্ট ৪টি, ইন্টারসেকশন ৩টি ও আরসিসি সসার ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

দ্বিতীয় প্যাকেজে ১ দশমিক ৯২ লাখ ঘনমিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, ৩ দশমিক ৫ কি.মি নতুন পেভমেন্ট, দশমিক ৪ কি.মি বাঁক সরলীকরণ, ৫ দশমিক ৪০ কি.মি পেভমেন্ট শক্তিশালীকরণ ও প্রশস্তকরণ, দশমিক ৩০ কি.মি রিজিভ পেভমেন্ট, আরসিসি বক্স কালভার্ট ৫টি, আরসিসি ড্রেনেজ স্লুইস গেট ২টি, ইন্টারসেকশন ১টি, আরসিসি সসার ড্রেন, সাইন-সিগন্যাল, গাইড পোস্ট, রোড মার্কিং নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

এছাড়া নতুন করে নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত সড়কের অংশ সাবমেরিন ঘাঁটি বানৌজা শেখ হাসিনা সড়কে যাতায়াতের জন্য ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে সড়কের কাজ চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুন : সপ্তাহ না যেতেই পুরনো রূপে নতুন সড়ক

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হিজবুল্লাহ বলেন, তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করতে গিয়ে কাজের মান ঠিক রাখতে পারছেন না ঠিকাদার। তাছাড়া সুষ্ঠু তদারকির অভাবে নানা অনিয়ম হচ্ছে। এমনও দেখা গেছে বালুর পরিবর্তে পাহাড়ের মাটি দিয়ে সিমেন্টের মিশ্রণ (মসলা) তৈরি করে গাইডওয়ালের আস্তরণ দেওয়া হয়েছে। এ সড়ক নির্মাণে দায়সারা কাজ করে সরকারি অর্থ লোপাটের উৎসব চলছে।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোগ সড়কের কাজে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সওজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আঁতাত করে খুবই নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

তিনি আরও বলেন, বরাদ্দের অর্ধেক টাকার কাজও করা হলে সড়কটি অন্তত কিছুটা টেকসই হতো। সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে এ সড়ক ভরাটের অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল কনস্ট্রাকশনকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। তাদের প্রতিটি কাজই অনিয়মে ভরা।

তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার জামিল আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তদারকিতে আমাদের প্রতিটি কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ভালোভাবে অধিকাংশ কাজ শেষ করেছি।

যোগাযোগ করা হলে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সংযোগ সড়ক প্রকল্প পরিচালক আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, প্রকল্পের প্রতিটি কাজ আমাদের তদারকিতে হচ্ছে। সেখানে অনিয়ম বা নির্মাণ ত্রুটির কোনো সুযোগ নেই। নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!