‘ক্ষমতার জোর’—৪ কোটি টাকার জমি ৮ হাজারে ভাড়ায় লাগালেন চসিক প্রশাসক সুজন

নগরের সাগরিকা রোডে ৭ কাঠা আয়তনের একটি জমি অবিশ্বাস্য দামে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মাত্র ১ টাকা ৬৫ পয়সায় দরে এ বাণিজ্যিক এলাকার জমি ভাড়া দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। সংস্থাটির প্রশাসকের দায়িত্বে থাকাকালে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন পানির দরে জমিটির ভাড়া অনুমোদন দেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমিটির বর্তমান বাজার মূল্য অন্তত ৪ কোটি টাকা। ৪ কোটি টাকা মূল্যের এই জমিটি ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে চসিকের আয় হবে মাত্র ৮ হাজার ৩৩ টাকা!

চসিক সূত্রে জানা যায়, সাগরিকা রোডের উত্তর পাশে ফুটপাত সংলগ্ন ৫ হাজার ৫৫ বর্গফুটের এই খালি জায়গা দেওয়া হয়েছে সাগরিকা নার্সারির মালিক মো. বাদশা নামের এক ব্যবসায়ীকে। জায়গাটি প্রতি বর্গফুটের মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১ টাকা ৬৫ পয়সা। এ হিসাবে ৫ হাজার ৫৫ বগফুট জায়গায় প্রতিবছরে ভাড়া ১ লাখ টাকা। এক বছরের ভাড়া ১ লাখ টাকা অগ্রিম হিসেবে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধও করা হয়েছে।

চসিকের গত ১৫ বছরের ইতিহাসে এত কম দামে বাণিজ্যিক জমি ভাড়া দেওয়ার নজির নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগের বিষয়ে চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আবার কল করে বক্তব্যের জন্য ‘বিরক্ত’ না করতেও তিনি প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মু. মোজাম্মেল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া মিলেনি তাঁরও।

এদিকে ১৮০ দিন মেয়াদকালে সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চসিক। বৃহস্পতিতিবার (২০ এপ্রিল) কমিটি অনুমোদন দেন চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

কমিটিতে চসিকের প্যানেল মেয়র-২ ও বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক এবং প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- আইন কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার দাশ ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন।

চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ আগস্ট চসিকের প্রশাসকের দায়িত্ব নেন খোরশেদ আলম সুজন। ১৮০ দিন দায়িত্ব পালন শেষে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। ওই সময়ে নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১২টি জায়গা ১০ জনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ দেওয়া জায়গার মোট পরিমাণ ১৭ হাজার ১৮৮ বর্গফুট। নগরের গুরুত্বপূর্ণ ও বাণিজ্যিক এলাকার এসব জায়গা প্রতি বর্গফুট সর্বনিম্ন এক টাকা ৮০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৮৫০ টাকায় মাসিক ভাড়া ধার্য করা হয়।

জায়গা বরাদ্দ পাওয়া ১০ জনের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও তাদের পরিবারের সদস্য আছেন ছয়জন। যারা সাবেক প্রশাসকের ঘনিষ্ঠজন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের তৃতীয় সাধারণ সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!