‘কাদাজলে’ করোনাকালে লাশ কাঁধে, কবরে—শ্মশানে ছুটছে গাউসিয়া

দেশে দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে করোনা। করোনার কথা শুনলেই সবাই দূরে সরে যায়। অথচ এমন একটি ‘মানবিক সংগঠন’ আছে সকাল থেকে রাত অবধি যাদের কাজ করোনাকে সঙ্গী করেই!

শুরু থেকেই করোনা রোগীদের পাশে আছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। করোনা টেস্ট থেকে শুরু করে রোগীকে হাসপাতাল পৌঁছানো, অক্সিজেন সেবা সবকিছুই করে এই সংগঠনের সদস্যরা। এর চেয়ে বড় বিষয়, মারা যাওয়া করোনা রোগীর দাফন-কাফনের পুরো ব্যবস্থাটাই তারা করে দেয় বিনামূল্যে!

গাউসিয়া কমিটি করোনা রোগীদের সেবা ও লাশ দাফনে চালু করেছে আলাদা হটলাইন। সারাদেশে তাদের প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। যারা নিরলসভাবে দিন-রাত রোগীর সেবা ও লাশ দাফনের কাজে নিয়োজিত আছেন। কল পেলেই সংগঠনের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে যান হাসপাতাল কিংবা রোগীর বাড়ি।

তবে দেশে করোনা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হওয়ায় প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে সংগঠনের দাফন-কাফন কমিটির। পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় থাকায় রোগী ও স্বজনদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে বর্তমানে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

কমিটি সূত্রে জানা যায়, করোনাকালের শুরুতে গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রামে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোগী বহন ও দাফন-কাফন কাজ শুরু করে। বর্তমানে চারটি অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি রয়েছে প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক। কিন্তু এসব দিয়ে তারা কুলোতে পারছেন না। কারণ প্রতিদিন হটলাইনে অসংখ্য ফোন আসছে।

কেউ ফোন করছে রোগী বহনের জন্য, কেউ অক্সিজেনের জন্য। আবার অনেক রোগীর স্বজন ফোন করছেন লাশ দাফনের জন্য। মাত্র চারটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সবগুলো কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আরও অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন।

কমিটি জানায়, প্রতিদিন ২০ জন মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন-কাফনের কাজ করতে হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। শুধু মুসলিম নয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকেও সৎকার করা হচ্ছে।

কমিটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সর্বশেষ ২৩ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২ হাজার ৮৮৬ জনসহ সারাদেশে ৩ হাজার ৫৩৮ জন মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকার সম্পন্ন করেছে গাউসিয়া কমিটি। এদের মধ্যে ৩৭ জন হিন্দু, ৫ জন বৌদ্ধ, ১ জন মারমা, ১ জন খ্রিস্টানসহ মোট ৪৪ জন বিভিন্ন ধর্মের লোক ছিলেন। এছাড়া ৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধা, অজ্ঞাত লাশ ২৪ জন এবং ৪ জন কারাবন্দি কয়েদির লাশও দাফন করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৮৮৯ জন করোনা রোগীকে জরুরি অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ২৭ জনকে। প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ কোভিড-১৯ টেস্ট টিমের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

গাউছিয়া কমিটি কেন্দ্রীয় দাফন-কাফন সমন্বয় কমিটির সদস্য ও উত্তর জেলা কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আহসান হাবিব চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে করোনায় মারা যাওয়াদের লাশ দাফন-কাফনের কাজে আমরা এগিয়ে এসেছি। প্রথমদিকে কিছুটা ভয় ছিল তবুও ছুটে গেছি। কারণ মৃত মানুষটি যেন বিদায়কালে তার শেষ মর্যাদাটুকু পায়।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা চারটি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে ভীষণ হিমশিম খাচ্ছি। কারণ প্রতিদিন হটলাইনে অসংখ্য ফোন আসছে। সেবা না পাওয়া অনেক মৃত ব্যক্তির স্বজনকে পকেটের টাকা দিয়েই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। যা আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানরা যদি করোনার এই দুঃসময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে অবশ্যই আমাদের সেবার পরিধি আরও বাড়াতে পারব।

আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!