করোনার কাছে হার মানলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন।
শুক্রবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশানের শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
১৯ জুলাই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। এর দুইদিন পর ২১ জুলাই থেকে তাঁর জ্বর-সর্দিসহ করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার গুলশান শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর নন ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। পরে অবস্থা আরো অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন: অসময়ে চলে গেলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাসবী বড়ুয়া
সিআরবির প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তিনি লোকসমাগমে বক্তৃতা করেছেন এবং অধিক মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন। সেখান থেকেই তিনি করোনা আক্রান্ত হতে পারেন বলে ধারণা তাঁর পরিবারের।
অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিনের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালীতে হলেও তিনি বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে। তাঁর বাবার নাম শহীদ আলী করিম ও মা হুরমোজা বেগম। তাঁর বাবাও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।
চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেনের গবেষণা নির্দেশনায় তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তাঁর লেখা বইয়ের তথ্য দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ১/১১ এর সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেন। আর এজন্য চবি’র তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবু ইউসুফের সঙ্গে তাকেও অপদস্ত করা হয়েছিল পতেঙ্গার র্যাবের কার্যালয়ে।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের শোক
অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম।
এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ একজন মুক্তবুদ্ধি চর্চার, স্বাধীনতার পক্ষের প্রগতিশীল আলোকিত মানুষকে হারালো। স্রোতের বিপরীতে তিনি নীতি-আদর্শে আমৃত্যু অবিচল ছিলেন।
বিবৃতিদাতারা হলেন- সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম মন্টু, সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী, মহানগর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বি কে বিশ্বাস ও নারীবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুন নাহার খুশী।
নেতৃবৃন্দ তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।