কঠোর বিধিনিষেধ : ৭ ‘নিষেধাজ্ঞা’, ছাড় ৮ খাতে, ৯ নির্দেশনা

সারাদেশে শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হচ্ছে। যা চলবে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত।

দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরআগে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত একই কারণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সেসময় মার্কেট-গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা।

পরে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার।

শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে আবার শুরু হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ। এবারের বিধিনিষেধ চলাকালে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

আরও পড়ুন: ‘নতুন সিদ্ধান্ত’ — ৩ সেক্টর ‘কঠোর’ লকডাউনের বাইরে

Yakub Group

এবারের কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে ছয়টি খাত পুরোপুরি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের বিষয়টি মাথায় রেখে ছাড় দেওয়া হয়েছে আটটি ক্ষেত্রে। এছাড়া বিধিনিষেধ সংশ্লিষ্ট নয়টি বিশেষ নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে।

৪ স্তরের ‘বাধার প্রাচীর’

কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকরে সারাদেশে রাজপথে থাকছে চার স্তরের বাধার প্রাচীর। প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সেনা ও বিজিবি সদস্যরাও থাকছেন মাঠে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিধিনিষেধ চলাকালে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

রাজপথে অনিয়ম দেখলে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি থাকবে র‌্যাবও।

‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে।

এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি ও কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবেন বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও।

বন্ধ থাকবে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা

আগেরবার কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা খোলা থাকলেও এবার বন্ধ থাকবে এসব প্রতিষ্ঠান। তবে প্রয়োজনের বিষয়টি মাথায় রেখে তিনটি খাতে দেওয়া হয়েছে ছাড়।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত মিল-কারখানা, কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানার কার্যক্রম কঠোর বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে।

৭ ‘নিষেধাজ্ঞা’

১) সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

২) সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া শুক্রবার ভোর থেকেই সবধরনের নৌযান এবং ফেরিতে যাত্রী ও যাত্রীবাহীসহ সব ধরনের পরিবহনও বন্ধ থাকবে। ফেরিতে শুধু যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্যবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার হবে।

৩) শপিং মল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

৪) সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

৫) সব ধরনের শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে।

৬) জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক বিবাহত্তোর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

৭) অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাড় ৮ খাতে

১) খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত মিল-কারখানা, কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানার কার্যক্রম কঠোর বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবে।

২) আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রি, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

৩) জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি/কাভার্ডভ্যান/নৌ-যান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

৪) বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।

৫) কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৬) টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা নেওয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।

৭) খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।

৮) আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট/প্রমাণ প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।

৯ নির্দেশনা

১) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

২) ব্যাংক-বিমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৩) সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজগুলো ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।

৪) বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

৫) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

৬) ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

৭) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি/কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি সময় নির্ধারণ করবেন। সেইসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনও কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলো এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

৮) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৯) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।

বিধিনিষেধ আগের চেয়ে কঠোর হবে : জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এবারের বিধিনিষেধ আগের চেয়ে কঠোর হবে। বিধিনিষেধ কার্যকর করতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন।

আরও পড়ুন: ‘করোনা’—২২ জুলাই ঘিরে শঙ্কা, চট্টগ্রামের ৪ পয়েন্ট ও ছয় স্পটে দৃষ্টি

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অফিস-আদালত, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ সবকিছু বন্ধ থাকবে। এ পর্যন্ত যত সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে সেভাবেই চলবে।

জেডএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!