কক্সবাজারে বেড়েছে ছিনতাই—থানায় গেলে পুলিশ পরামর্শ দেয় হারানো জিডি করার

পর্যটন শহর কক্সবাজারে ছিনতাই বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে ১০টির বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েও মিলছে না প্রতিকার। পুলিশ উল্টো পরামর্শ দেয়, ছিনতাইয়ের বিষয়টি না এনে হারানো জিডি করতে।

জানা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ১টি, ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ও রাতে ২টি ও ১ মার্চ সকাল ও রাতে ২টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছ। তবে এসব ছিনতাই ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ।

সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে আইনজীবী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, এনজিওকর্মী, পর্যটক কেউই ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী।

আরও পড়ুন: জেল থেকে বেরিয়ে রাতের আঁধারে অটোরিকশায় শহর ঘুরে ছিনতাই

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে শহরের মোহাজেরপাড়া থেকে শহরের পৌর প্রিপারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুজন দাশ ও তাঁর স্ত্রী এনজিওকর্মী কৃষ্ণা দাশ বোনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। এ সময় মোহাজেরপাড়ার সমিতির বিল্ডিংয়ের গলির সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে ২/৩ জন ছিনতাইকারী সুজনের স্ত্রীর গলায় ছুরি ধরে। এরপর স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে শিক্ষক সুজন দাশ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে হোটেলে ফেরার পথে কলাতলীর মোড়ে ঢাকা মোহাম্মদপুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সুমাইয়া খানম ও রিফাত হাসান ছিনতাইয়ের শিকার হন। পেছন থেকে গলা চেপে ধরে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকাসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।

একইদিন একই স্থানে সকাল ৯টার দিকে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা রাজের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

ভুক্তভোগী রাজের অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন না।

আরও পড়ুন: নগদকর্মীর টাকা ছিনতাই—সর্ষের মধ্যেই ভূত

এরপর মঙ্গলবার (১ মার্চ) সকাল সোয়া ৬টার দিকে শহরের সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী প্রিয়তোষ। এ ঘটনায় রাতে থানায় অভিযোগ করতে গেলে উল্টো মোবাইল হারানো বা চুরির জিডির পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে।

ছিনতাইয়ের শিকার এনজিওকর্মী প্রিয়তোষ বেদজ্ঞ বলেন, সকাল ৬টার দিকে আমি উখিয়ায় যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হই। সেন্ট্রাল হাসপাতাল এলাকায় পৌঁছলে হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা দুই যুবক ছুরির ভয় দেখিয়ে মোবাইল, নগদ টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়।

প্রিয়তোষ বেদজ্ঞর ছোট ভাই মনতোষ বেদজ্ঞ বলেন, সকালে দুই যুবক ছুরির ভয় দেখিয়ে আমার ভাইয়ের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভাইকে নিয়ে থানায় যায়। কিন্তু থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা জানান ছিনতাইয়ের জিডি নেওয়া সম্ভব নয়। চুরি বা হারানোর অভিযোগে জিডি করতে হবে। এরপর বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে থানার ওসিকে মুঠোফোনে অবহিত করি। তিনি আমাকে নিজের কক্ষে ডেকে একই পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন: ফেসবুক প্রেম—আড়ালে ছিনতাই, জামালখানে নিজেদের ফাঁদে ধরা প্রেমিকা চক্র

অন্যদিকে একইদিন মঙ্গলবার (১ মার্চ) রাত ৭টার দিকে শহরের বাস টার্মিনাল থেকে অটোরিকশা করে কলাতলীর হোটেলে যাওয়ার সময় উত্তরনের সামনে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রেজাকে একদল ছিনতাইকারী পথরোধ করে। পরে তাঁর পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় ।

এদিকে এ ঘটনায় বুধবার (২ মার্চ) কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

প্রতিবাদ সমাবেশে অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা (স্পেশাল পিপি) বলেন, কক্সবাজার শহরে বর্তমানে ছিনতাইয়ের রামরাজত্ব চলছে। আমার স্কুলপড়ুয়া ছাত্রকেও ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ অপরাধীদের আটক করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। যেকারণে দিন দিন এই জেলা শহরের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গিয়াস আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় হারানো ডায়েরি করার পরামর্শের বিষয়টি সত্য নয়। আমি ভুক্তভোগীকে বলেছি কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর জিডি করা যায় না। হয়ত মামলা, নয়ত হারানো ডায়েরি করতে হবে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা যদি হয়ে থাকে তাহলে প্রকৃত তথ্য দিয়ে ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করবেন।

আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!