সন্ধ্যা হতেই ফ্লাইওভারে ওঁৎ পেতে থাকে তারা। সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে হাতিয়ে নেয় সর্বস্ব।
ছিনতাই থেকে বাদ যায় না যানবাহনও। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গাড়ি থেকেও লুট করে তারা। কাজ শেষ হলেই পানি নিষ্কাশনের পাইপ বেয়ে নেমে যায় নিচে। এরপর গার্ডারের নিচে গিয়ে লুটের মালামাল ভাগ করে। এটি তাদের প্রতিদিনের ‘রুটিন ওয়ার্ক’।
এভাবেই চলছিল ছিনতাই। আর পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই বিশেষ কায়দার লুকিয়ে থাকে গার্ডারের কোণায়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। সেই পুলিশের হাতেই এবার ধরা পড়ল ছিনতাইকারী দলের ৭ সদস্য। শনিবার (২৮ আগস্ট) রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘অস্ত্র উঁচিয়ে’ ১০ বছর বহদ্দারহাট কাঁপাচ্ছেন ‘ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী’ জাবেদ
সাত ছিনতাইকারী হলো- মো. হৃদয় হোসেন (১৯), শহিদুল ইসলাম মনা (২২), চাঁন মিয়া (২১), মো. হাসান (১৯), মো. আরিফ (১৯), আনিচ (১৯) ও মো. মহসিন উদ্দিন ওরফে টুকু (৩০)।
এদের মধ্যে টুকু ছাড়া ছয়জনকে ওয়াসা জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের দক্ষিণে মাঠসংলগ্ন পরিত্যক্ত এক ঘর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় টুকু পালিয়ে যায়। তবে গ্রেপ্তার ছিনতাইকারীদের দেওয়া তথ্যে দামপাড়া মসজিদ গলি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এই ছিনতাই দলের নেতৃত্বের রয়েছে মহসিন উদ্দিন ওরফে টুকু। তার নামে খুলশি ও ডবলমুরিং থানায় দুটি মামলা আছে। এছাড়া চকবাজার থানায় হৃদয় ও শহিদুলের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা রয়েছে। চাঁন মিয়া ও হাসানের নামে অস্ত্র মামলা আছে একটি করে। আর আরিফের নামে দুটি মামলা আছে, যার একটি মাদকের।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে দেশি এলজি, ছুরিসহ ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, কোতোয়ালি থানার এসআই সুকান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওয়াসা জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের মাঠসংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় ছয় ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হলেও পালিয়ে যায় টুকু। পরে গ্রেপ্তার ছিনতাইকারীদের দেওয়া তথ্যে দামপাড়া মসজিদ গলি থেকে টুকুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে ছয় ছিনতাইকারীকে তল্লাশি করে এলজি, ছুরিসহ ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত রড, ছেনি এবং তালা কাটার যন্ত্র উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘টার্গেট’ করে ছিনতাই—৩ জন পুলিশের জালে, ৪ জন কোথায়
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, বহদ্দারহাট থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভারে তারা সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে। পরে পানি নিষ্কাশনের পাইপ বেয়ে নিচে নেমে নিজেদের মধ্যে মালামাল ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। আর পুলিশ দেখলে গার্ডারের পাশে স্ল্যাবের কোণায় লুকিয়ে পড়ে। এভাবেই প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত তারা ছিনতাই করে আসছিল।
ফ্লাইওভার ছাড়াও তারা নগরের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানায় ।
কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে ফ্লাইওভারে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন গাড়িতে ছিনতাই করে। পরে গার্ডারের কোণায় বসে মালামাল ভাগ-বাটোয়ারা করে। এছাড়া তারা নগরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা-বাড়ির গ্রিল কেটেও চুরি-ডাকাতি করে। দলটিকে নেতৃত্বে রয়েছে মহসিন উদ্দিন টুকু। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা রুজু হয়েছে।
ডিসি