হালদায় ভেসে বেড়াচ্ছে আশার ভেলা। তাদের সেই আশায় দোলা দিয়েছে মা মাছ। হালদা নদীতে ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে মা মাছের দল। তবে এখনো ডিম ছাড়েনি মা মাছ। বজ্রপাতসহ মুষলধারে বৃষ্টি হলে তবেই ডিম ছাড়বে মা মাছ—বলছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা। তাই আশার ভেলা নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ডিম সংগ্রহকারীরা।
সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের যেকোনো পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কয়েকদিন আগে ও পরে জোয়ার-ভাটার সময় মা মাছ হালদায় ডিম ছাড়ে। শুক্রবার (১৩ মে) থেকে পূর্ণিমার জো শুরু হয়েছে। এখন প্রতীক্ষা শুধু মেঘের গর্জন ও ভারী বর্ষণ। এ দুটো যোগ হলেই হালদায় ডিম ছাড়তে শুরু করবে মা মাছ।
রোববার (১৫ মে) ভোররাত থেকে হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশে নৌকা আর বাঁশের ভেলার ওপর দাঁড়িয়ে জাল ফেলে ডিমের অপেক্ষায় রয়েছেন শত শত ডিম সংগ্রহকারী। তবে আজ (রোববার) বিকাল ৪টা পর্যন্ত হালদায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ। তবে গত শুক্রবার থেকে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৭ থেকে ৮টি করে ডিম উঠেছে জেলেদের জালে।
আরও পড়ুন: হালদায় ভাসছে আশার ভেলা, নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ
এদিকে পূর্ণিমার জো’র সময় জোয়ারের পানির সঙ্গে হালদা নদীতে লবণাক্ত পানি ঢুকেছে। এসময়ে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়লেও লবণাক্ত পানির কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে ।
হালদা গবেষকরা বলছেন, চলতি প্রজনন মৌসুমের শেষ পর্যন্ত নদীর পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বর্তমান পরিস্থিতির মতো বজায় থাকলে হালদায় কার্প জাতীয় অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস মা মাছের ডিম ছাড়ার রেকর্ড হতে পারে।
কয়েক যুগ ধরে হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন প্রফুল্ল দাশ। হালদাপাড়ের এই বাসিন্দা বলেন, ভারী বৃষ্টি হলে ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। সংগ্রহকারী সবাই এই প্রতীক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।
যোগাযোগ করা হলে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, শনিবার রাতেও অল্পসংখ্যক নমুনা ডিম পেয়েছেন সংগ্রহকারীরা। রাউজান ও হাটহাজারী অংশের চারটি হ্যাচারিসহ নদীর দুপাড়ের প্রায় ১৭০টি মাটির কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে হালদা নদীর মা মাছ তথা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মাঠে রয়েছে রাউজান ও হাটহজারী উপজেলা প্রশাসন। শনিবার (১৪ মে) রাতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় অভিযান চালিয়ে নৌকাসহ ৩০০টি বড়শি, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও কেমিক্যাল জব্দ করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। এসময় এক ব্যক্তিকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত ।
আরও পড়ুন: মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমেও হালদায় চলছে বালু উত্তোলন—যান্ত্রিক নৌযান
এর আগে রাউজানে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার অপরাধে দুজনকে ১০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জোনায়েদ কবির সোহাগ।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেনায়েদ কবির সোহাগ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আজ (রোববার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হালদা নদী ঘুরেছি। তবে এখনও নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়েনি। মা মাছ ডিম ছাড়লে ডিম সংগ্রহকারীদের সহায়তা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে ।
উলেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত একটা জো চলে গেছে। বৃষ্টি হলেও পর্যাপ্ত ছিল না। শুক্রবার শুরু হওয়া জো থাকবে ১৮ মে পর্যন্ত। বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হলে এই জোতে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা বেশি। আগামী ২৫ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত আরও একটি জো আছে।
আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম