এক মায়ের দুই ছেলেকে খুন—২০ বছর লুকিয়েও বাঁচতে পারল না খুনি

চাঞ্চল্যকর লোহাগাড়ার ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সৈয়দ আহমেদকে (৬০) অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

২০ বছর আগের সেই মামলার ফাঁসির সাজা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন জায়গায় উদ্বাস্তু হিসেবে থাকতেন তিনি। এছাড়া মাজারের বাবুর্চির কাজও করেন। সর্বশেষ আকবরশাহ এলাকায় এক বাড়িতে দারোয়ানের কাজ করছিলেরন।

শুধু জানে আলম নয়, এর আগে তার ভাইকেও খুন করেন সৈয়দ আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে নগরের আকবরশাহ থানা এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‍্যাব-৭ এর একটি দল।

আরও পড়ুন : খুন করে অপমৃত্যুর প্রচার—রিমান্ডে ২ আসামি

আটক সৈয়দ আহমেদ লোহাগাড়া থানার আমিরাবাদ এলাকার মৃত ইয়াকুব মিয়ার ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‍্যাব-৭ এর সিনিয়র পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার।

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ৯ নভেম্বর পূর্বশত্রুতার জেরে জানে আলমের আপন ছোট ভাইকে সৈয়দ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। পরে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করে লোহাগাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলার সাক্ষী ছিলেন নিহতের বড় ভাই ব্যবসায়ী জানে আলম।

ভাইয়ের হত্যা মামলা যাতে চালাতে না পারে সেজন্য ২০০২ সালের ৩০ মার্চ সকালে সৈয়দ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা একই কায়দায় ব্যবসায়ী জানে আলমকে তার শিশুসন্তানের সামনে লাঠি, ধারাল অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর জানে আলমের বড় ছেলে তজবিরুল আলম বাদি হয়ে ২১ জনকে আসামি করে লোহাগাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দুই মামলায় সৈয়দকে দুই নম্বর আসামি করা হয়।

আরও জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই লোহাগাড়ার আলোচিত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আদালত ১২ জনকে ফাঁসি ও ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পরে আসামিরা সুপ্রিম কোর্টে আপীল করলে সুপ্রিম কোর্ট সৈয়দ আহমেদসহ ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন এবং ২ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। বাকিদের খালাস দেওয়া হয়।

র‍্যাব-৭ এর সিনিয়র পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে ২০০১ সালের ৯ নভেম্বর ব্যবসায়ী জানে আলমকে আপন ছোট ভাই সৈয়দ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। ওই হত্যা মামলায় জানে আলম প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন এবং মামলার ব্যয়ভার সব কিছু তিনি বহন করতেন। সন্ত্রাসীদের ধারণা ছিল, জানে আলমকে হত্যা করতে পারলে মামলা-মোকদ্দমা ও সাক্ষী কিছু থাকবে না। এ কারণে জানে আলমকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায় তারা।

আরও পড়ুন : রক্তাক্ত বদরখালী সমিতি—সালিসে যুবককে কুপিয়ে খুন, ৩ জন চট্টগ্রাম মেডিকেলে

তিনি আরও বলেন, ঘটনা সংঘটিত করার পর সৈয়দ আহমেদ বাঁচতে বাঁশখালী ডাকাত দলের সঙ্গে আনোয়ারা, কুতুবদিয়া ও পেকুয়ার সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিল। পরবর্তীতে সে সীতাকুণ্ড এলাকায় উদ্বাস্তু হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে অবস্থান করে। এরপর জঙ্গল ছলিমপুরের মতিউরের সহযোগিতায় সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। একপর্যায়ে সে নগরের বিভিন্ন মাজার এলাকায় বাবুর্চির কাজ করে। সর্বশেষ আকবরশাহ এলাকায় বাড়ির দারোয়ানের কাজ নিয়ে সেখানে বসবাস করে। সে বিভিন্ন জায়গায় ভুয়া পরিচয় দেওয়াতে তাকে গ্রেপ্তর করা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি—জানে আলম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সৈয়দ আহমেদ নগরের আকবরশাহ এলাকায় অবস্থান করছে। এরপর অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এএইচ/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!