সেলিনা আক্তার ছিলেন হতভাগা এক নারী। যার দুঃখের গল্পের শুরুটা হয়েছিল এক যুগ আগে। তবে এক যুগ পর হঠাৎ বদলে গেছে তাঁর জীবন।
বঙ্গবন্ধুকন্যার কল্যাণে গৃহহীন সেলিনা পেয়েছেন নতুন ঘর। এর পরও চার মেয়েকে নিয়ে বিধবা এই মায়ের চিন্তাটা রয়েই গিয়েছিল। তবে সেই চিন্তাটাও দূর হয়ে গেল মুহূর্তেই!
প্রধানমন্ত্রীর পথে এবার সঙ্গী হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বঙ্গবন্ধুকন্যা আর আ জ ম নাছিরের কল্যাণে হতাভাগা নারী সেলিনাই হয়ে গেলেন সৌভাগ্যবতী!
গল্পটা তাহলে শুরু থেকেই শুরু করা যাক…
ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র চার মেয়ের জননী সেলিনা আক্তার। থাকেন হাটহাজারী থানার গুমানমর্দ্দন গ্রামে। ১২ বছর আগে সন্তান ও স্ত্রীকে একা রেখে না ফেরার পথে পাড়ি জমান স্বামী মজিবুর রহমান। এরপর গার্মেন্টেসে চাকরি করে অভাবের সংসার কোনোভাবে টানছিলেন সেলিনা।
সেলিনার ছিল না মাথা গোঁজার ঠাঁই। এরমধ্যে মুজিববর্ষ উপলক্ষে খুলে যায় তাঁর কপাল। পেয়ে যান নতুন ঘর!
মুজিববর্ষের ঘর উপহার পেয়ে সেলিনা কোনোভাবে চললেও তার মেধাবী চার মেয়ের পড়াশোনায় ‘বাধা’ হয়ে দাঁড়ায় দারিদ্র্যতা। মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে যখন অস্থির সেলিনা ঠিক তখনই পাশে দাঁড়ান জননেতা আ জ ম নাছির। সেলিনার চার মেয়কে পুনরায় স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে পড়াশোনা শেষ হওয়া পর্যন্ত সব খরচের দায়িত্ব নেন তিনি।
আরও পড়ুন: ঝুপড়ি ঘর ছেড়ে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম এখন নতুন ঘরে, সঙ্গে প্রতিবন্ধী মেয়েও
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে নগরের আন্দরকিল্লার নিজ বাসায় হতদরিদ্র সেলিনাকে ডেকে নগদ অর্থ সহায়তার পাশাপাশি তাঁর চার মেয়ের পড়ালেখার দায়িত্বভার নেওয়ার ঘোষণা দেন আ জ ম নাছির। এসময় তিনি পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য তাঁকে দুটি রিকশা নিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দেন।
সেলিনার চার মেয়ে হলেন— সুমি আক্তার (১৭), রুমি আক্তার (১৫), রোমা আক্তার (১৩) ও চাটনি আক্তার (১১)।
প্রসঙ্গত, মুজিববর্ষে দেশের প্রতিটি থানায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য একটি করে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পুলিশ। রোববার (১০ এপ্রিল) গণভবন থেকে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ লাইনসের সিভিক সেন্টার ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় গৃহ হস্তান্তর ও সার্ভিস ডেক্স উদ্বোধন করেন তিনি। পরে মুজিববর্ষে ঘর উপহার পাওয়া এক নারীর কথা শুনেন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে সেলিনা বলেছিলেন, আমি ও আমার চার মেয়েকে ছেড়ে চলে গেছে স্বামী। চার মেয়েকে নিয়ে একমুঠো খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন পার করেছি। আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। মুজিববর্ষে আপনার নির্দেশে আমি একটি ঘর পেয়েছি। আমি দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমার চার মেয়ে বড় হচ্ছে। তাদের কোথায় রাখবো। এখন বাড়ি পেয়েছি। কিন্তু অভাবের সংসারের মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে সেলিনার সঙ্গে কথা হয় আলোকিত চট্টগ্রামের। তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির ভাইয়ের বাসায় আমাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার পরিবারের কথা শুনে তিনি আমার হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। পাশাপাশি আমার চার মেয়ের পড়ালেখার সব দায়িত্ব নেন।
তিনি বলেন, এখন আমার চার মেয়েকে নতুন করে মাদ্রাসায় ভর্তি করাব। প্রয়োজনে আরো দুটি রিকশা নিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন নাছির ভাই। আল্লাহর কাছে হাজার কোটি শুকরিয়া। অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছিলাম। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে, মেয়েদের পড়ালেখার সুযোগও হয়েছে। আল্লাহ যেন নাছির ভাইকে আরও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ দেন।
আরও পড়ুন: অসহায় মানুষকে সাহায্য করা ইবাদত : আ জ ম নাছির উদ্দীন
এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের ব্যক্তিগত সহকারী রায়হান ইউসুফ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে গৃহহীন পরিবারের কাছে ঘর হস্তান্তর করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। সেখানে গৃহহীন সেলিনা নামে এক নারীর কথা শুনেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠান থেকে আসার পর ওই পরিবারের খোঁজখবর নিতে বলেন নাছির ভাইকে। খোঁজখবর নিয়ে আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে ওই পরিবারকে নাছির ভাইয়ের নিজ বাসায় ডাকা হয়। তারপর ওই পরিবারের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকার অনুদান তুলে দেওয়া হয়।
পাশাপাশি অসহায় সেলিনার চার মেয়ের পড়ালেখার সব খরচের দায়িত্বভারও নিয়েছেন নাছির ভাই। তারা যতটুকু পড়ালেখা করতে চান, তার সব খরচ নাছির ভাই বহন করে যাবেন। প্রয়োজনে পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য আরো দুটি রিকশা নিয়ে দেওয়ার আশ্বাস ও দেন তিনি।