ইতিহাস গড়ে টাইগারদের লঙ্কাজয়, ওয়াসিম আকরামের রেকর্ডের পাশে সাকিব

আক্ষেপটা দীর্ঘদিনের। লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতলেও জেতা হয়নি সিরিজ। ২০০২ সাল থেকে শুরু হওয়া সেই আক্ষেপটা দূর হয়েছে এবার। দীর্ঘ দেড় যুগ পর অবশেষে ধরা দিলো সাফল্য। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। আবার এ জয়ে ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে টাইগাররা!

এর আগে ৮টি সিরিজে মুখোমুখি হলেও ছয়টিতে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। বাকি দুটো ড্র হয়। শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো টাইগারদের। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টানা ৯ ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটিও হয়েছে মঙ্গলবার (২৬ মে)।

বৃষ্টির শঙ্কা আছে- এমনটা জানার পরও টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। তবে দলনেতার এ সিদ্ধান্ত যথার্থ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন ব্যাটসম্যানরা। তবে একপ্রান্ত ঠিকই আগলে রেখেছিলেন মুশফিকুর রহিম। মূলত তাঁর সেঞ্চুরিতেই দলের সংগ্রহ পৌঁছে ২৪৬ রানে। যদিও এই সংগ্রহ প্রথম ম্যাচের চেয়ে ১১ রান কম!

প্রথম ম্যাচের মতো এবারও শুরুটা ভালো করতে পারেননি তামিম-লিটন। দলের খাতায় ১৫ রান উঠতেই গত ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান তামিম ১৩ রান করে ফিরে যান চামিরার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে। এর দুই বল পর চামিরা দ্বিতীয় শিকার বানান সাকিবকে। রানের খাতা খেলার আগেই সাজঘরে ফেরেন তিনি।

দলীয় ৪৯ রানে লিটন (২৫) ও ৭৪ রানে মিথুনের জায়গায় সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেককে (১০) সান্দাকান প্যাভিলিয়নে ফেরালে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

সেই চাপমুক্তির ত্রাতা হিসেবে হাজির হন মুশফিক। এক প্রান্ত ঠিকই আগলে রাখেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে গড়েন ৮৭ রানের জুটি। তাদের এ জুটি ভাঙে মাহমুদউল্লাহর ভুলে। অযথা প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৯ রান দূরে থেকেই সান্দাকানের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন।

এরপর লড়াইটা মুশফিক একাই লড়ে যান। অন্যপ্রান্তে ব্যাটসম্যান আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও অপর প্রান্ত আগলে রেখে গত ম্যাচের মতো ভুল করেননি। ঠিকই ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি।

১২৫ রানের ইনিংস খেলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক যখন আউট হন তখন দলের সংগ্রহ ২৪৬।

২৪৭ রানের লক্ষ্য নিয়ে লঙ্কান দুই ওপেনার গুণাতিলকা ও কুশল পেরেরা শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু দলীয় ২৪ রানে কুশল পেরেরাকে (১৪) সাজঘরে পাঠিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শরিফুল। ওয়ানডেতে শরিফুলের এটি প্রথম উইকেট।

৫৩ রানে বিদায় নেন আরেক ওপেনার গুণাতিলকা (২৪)। তিনি মুস্তাফিজের শিকারে পরিণত হন। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আউট হলেও নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস ভালো রান তুলছিলেন। কিন্তু তাদের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান সাকিব। লঙ্কানদের দলের খাতায় যখন সংগ্রহ ৭১ রান তখন ফিরিয়ে দেন নিসাঙ্কাকে (২০)।

দলীয় সংগ্রহ ৭৭ হতেই ফিরে যান কুশল মেন্ডিস (১৫)। বলতে গেলে এর পরই শুরু হয় লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ছন্দপতন। নিয়মিত বিরতিতে একে একে ফিরে যান পাঁচ ব্যাটসম্যান। দলের সংগ্রহ তখন ১২২ রান। জয়ের জন্য তখনো জায়ান্ট স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছিল ১২৫ রান। ১ উইকেট ও ৮২ বল হাতে রেখে এ লক্ষ্য অর্জন তখন ‘আকাশ-কুসুম’ কল্পনার মতো।

এরমধ্যে খেলার ৩৮তম ওভারে আবারো বৃষ্টি আসলে খেলা গড়ায় ডিএল মেথডে। বৃষ্টি শেষে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ২৪৫। জয় পেতে ১১৯ রান দরকার মাত্র ১২ বলে!

ব্যস, শেষ পর্যন্ত ১ উইকেট না হারালেও সিরিজ ঠিকই হাতছাড়া হয়েছে শ্রীলঙ্কার। আর লঙ্কানদের বিরুদ্ধে প্রথম কোনো শিরোপা জয়ের আনন্দে তখন আত্মতুষ্টির ঢেকুর তুলতে ব্যস্ত তামিম বাহিনী।

বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজ ও মিরাজ ৩টি করে উইকেট নেন, সাকিব নেন ২টি। আর এই দুই উইকেট নিয়ে এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ওয়াসিম আকরামকে (১২২) ছুঁয়ে ফেলেন সাকিব। এ কীর্তি গড়তে সাকিবের খেলতে হয়েছে ৮৪ ম্যাচ।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৫০তম ওয়ানডে ম্যাচ ছিল এটি। আর ওয়ানডে ম্যাচের ‘হাফ সেঞ্চুরি’ জয় দিয়ে উদযাপন করেছে তামিম-সাকিব-মুশফিকরা। তবে শ্রীলঙ্কা এখনো পর্যন্ত ৩৯ ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে ২টি ম্যাচ ড্রও হয়েছে। আগামী ২৮ মে একই ভেন্যুতে শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দু’দল। যে ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে লড়বে লঙ্কানরা।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!