ইউএনও রুহুল আমিনের স্বাক্ষর জাল, এক নাজিয়ার হাতেই জিম্মি প্রকৌশল দপ্তর

‘স্যার, আমাকে মাফ করে দেন। এ রকম ভুল আর কখনো হবে না। আমার উপর শয়তান ভর করেছিল, তাই এমন জালিয়তি করেছি।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের প্রকৌশল দপ্তরের অফিস সহকারী নাজিয়া বেগম। সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিনের স্বাক্ষর জাল করে ধরা পড়েন তিনি। আর অপরাধ ঢাকতেই এমন মায়াকান্না জুড়ে দেন সবার সামনে।

সাবেক ইউএনও রুহুল আমিনের স্বাক্ষর জাল করে ‘মেসার্স আব্দুল্লাহ ট্রেডার্স’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেন নাজিয়া বেগম। হাটহাজারী উপজেলা রাজস্ব উদ্বৃত্ত (উপজেলা উন্নয়ন) ২০২০-২০২১ অর্থবছরে গড়দুয়ারা ইউপি এলাকায় বরাদ্দ প্রকল্পটি ৪ লাখ ৯ হাজার ৪৯৪ টাকার।

আরও পড়ুন : রেলে দুর্নীতির বড় ফাঁদ—বদলির ৪৮ ঘণ্টা আগে অনিয়মেই ৩২ নিয়োগ

জাল স্বাক্ষরের ফাইলটি উপস্থাপন করলে বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ইউএনও’র সহকারী সুমন মোহরের সন্দেহ হয়। তিনি ইউএনও শাহিদুল আলমকে বিষয়টি জানান। পরদিন বিকালে ইউএনও উপজেলা প্রকৌশলীসহ দপ্তরের সব কর্মকর্তাকে নিয়ে বৈঠক করেন।

বিষয়টি নিয়ে নাজিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি মায়াকান্না জুড়ে দিয়ে মাফ চান। আর নিজের ওপর তখন শয়তান ভর করেছিল বলে জানান। তার বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে দপ্তরে।

জানা যায়, নাজিয়া বেগম ও তাঁর স্বামী মো. হাফিজুর রহমান একই দপ্তরের কার্য সহকারী। ২০১৩ সাল থেকে তাঁরা প্রকৌশলী দপ্তরে আছেন বহালতবিয়তে। ‘ক্ষমতার দাপট’ দেখিয়ে প্রায় ৮ বছর ধরে জিম্মি করে রেখেছেন প্রকৌশল দপ্তরকে। এখানে কাজ পেতে হলে অথবা বিল নিতে এলে তাঁদের টাকা দিতে হয়। তা না হলে ফাইল নড়ে না।

বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁদের বদলি করা হয়নি। গত ১ জুলাই সাবেক ইউএনও রুহুল আমিন নাজিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনার এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগ করেছিলেন। তবে কয়েকবার চিঠি দেওয়ার পরও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বলতে গেলে হাটহাজারী উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর যেন স্বামী-স্ত্রীর ‘হাতের পুতুল’।

আরও পড়ুন : ‘দুর্নীতির হাট—৮ কর্তার দৌড়ঝাঁপ’ ডাক পড়েছে দুদকে, কাস্টমসে ৮৫০ কোটি টাকার অনিয়ম 

তবে যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সেই নাজিয়া বেগম নাকি কিছুই জানেন না স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুহূর্তেই সুর পাল্টে আলোকিত চট্টগ্রামকে তিনি বলেন, আমি এ রকম কোনো ঘটনা শুনিনি। এমনকি তাঁকে নিয়ে ইউএনওর বৈঠকের বিষয়েও কিছু জানেন বলে দাবি করেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে ইউএনও মো. শাহিদুল আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। একজন অফিস সহকারী কীভাবে সাবেক ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করে ফাইল উপস্থাপন করে? তিনি কী কাজটি একা করছেন, নাকি আরো কেউ জড়িত আছে− তা খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ প্রমাণ হলে শাস্তি হবে।

সিএম/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!