বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা আজ (৩ ফেব্রুয়ারি)। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত এই পূজা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে আয়োজন করা হয় জ্ঞানের দেবী সরস্বতী পূজা।
জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে প্রতিবারই একটু অন্যরকমভাবে উদযাপিত হয় স্বরসতী পূজা। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। এবার জেএম সেন হল মাঠে হচ্ছে ১২টি সরস্বতী পূজা। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও সংগঠনের ব্যানারে এসব পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
জেএম সেন হল মাঠের ১২ মণ্ডপের আয়োজকরা হলো— মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ, মাস্টারদা সূর্য সেন ক্লাব, বাংলাদেশ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি শিক্ষার্থী সংসদ, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম আইনজীবি বিজয়া সম্মিলন পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র-যুবক ঐক্য পরিষদ, পোর্ট সিটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, ওমরগণি এমইএস কলেজ, সনাতনী বিদ্যার্থী সংসদ, চট্টগ্রাম সনাতনী আইনজীবি কল্যাণ পরিষদ ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি।
আরও পড়ুন : ৩ উৎসব ঘিরে রঙে রঙিন চট্টগ্রাম
আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত একজন জানান, প্রতিবছর পূজা সরস্বতী পূজা উপলক্ষে জেএম হল মাঠে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থীর ব্যাপক সমাগম হয়। সবচেয়ে বেশি থাকে ছাত্র-ছাত্রী। কারণ আয়োজকদের বেশিরভাগই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
আজকের শিশিরস্নাত ঊষালগ্নে দেবী তার অগণিত ভক্তের মাঝে শুভাগমন করবেন। দেবীকে বরণে প্রস্তুত নগরের পূজা মণ্ডপগুলো। সাজানো হয়েছে বাহারি সাজে। অলি-গলিতে করা হয়েছে বাহারি লাইটিং। শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ডিজিটাল ব্যানার। স্কুল-কলেজেসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে আয়োজন রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রসাদ বিতরণ।
শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালে সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা হয়।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর প্রতিটি পূজামণ্ডপে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পন্ন হয়।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, এবার পঞ্চমী তিথি রোববার রাত ১২ টা ৩৪ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হবে সোমবার সকাল ৯ টা ৫৯ মিনিটে। এ সময়ের মধ্যে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে। এরপর ভক্তদের দেওয়া হবে অঞ্জলি। দুপুরে বিতরণ করা হবে মহাপ্রসাদ। সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতি, শীতল ভোগসহ রয়েছে নানা ধর্মীয় আয়োজন।
বৈদিক শাস্ত্রমতে সরস্বতী মূলত বৈদিক দেবী। সরস শব্দের অর্থ জল। সরস্বতী শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থে সরস (জল)+মতুন+ভীন (স্ত্রী)। অর্থাৎ সরস্বতী শব্দের আদি অর্থ হলো জলবতী অর্থাৎ নদী।
আরও পড়ুন : আজ শুধু জ্ঞানের আরাধনা
দেবী সরস্বতী জ্ঞানদায়িনী, সর্বশুক্লা, তিনি বাগদেবী ও নিষ্কলা, নিত্যশুদ্ধা, তিনি বৃদ্ধিদ্ধাত্রী ও মোক্ষদাত্রী। সরস্বতী দেবী জ্ঞান, বিদ্যা ও ললিতকলার অধিষ্ঠাত্রী হিসেবে পূজিত হয়ে আসছেন আদিকাল থেকে।
আজকের দিনটি অত্যন্ত শুভ। তাই এই দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃ তর্পণের প্রথাও প্রচলিত রয়েছে। লোকাচার অনুসারে ছাত্রছাত্রীরা সরস্বতী পূজার আগে কুল খেতে পারে না। পূজার দিন কিছু লেখাও নিষিদ্ধ। আর পূজার পরের দিনটি শীতল ষষ্ঠী নামে পরিচিত। দেবী সরস্বতীর মৃন্ময়ী মূর্তিতে নেই কোনো মারণাস্ত্র, হিংস্রতার লক্ষণ ও পশুশক্তির প্রতীক। রয়েছে শ্বেত শুভ্র বসন, জ্ঞানে মসি ও পুহমশক। হাতে শান্তির ললিতবীণার বীণাযন্ত্র, আছে চির প্রবহমান ফল্গুধারা, রয়েছে শ্বেতহংসবাহন।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিখিল কুমার নাথ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জেএমসেন হল মাঠে আমাদের সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১২টি মণ্ডপে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। সকালে পূজা-অর্চনা শেষে ভক্তদের দেওয়া হবে পুষ্পাঞ্জলি। এরপর শুরু হবে পিঠা উৎসব। এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। দুপুরে প্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যা থেকে আরতি। প্রতিবছর এখানে দর্শনার্থীর ঢল নামে। আশাকরি এবারও ব্যতিক্রম হবে না।
আলোকিত চট্টগ্রাম