আজ ষষ্ঠী—পালকিতে এলো দেবী দুর্গা, ফিরবে ঘোড়ায়

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ও সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আজ (বুধবার) ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে সপ্তমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে নগরের বেশিরভাগ মণ্ডপে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশকে নিয়ে অধিষ্ঠিত হয়েছেন দেবী দুর্গা। আনন্দ আয়োজনে বরণ করা হয় দেবী দুর্গাকে।

সরেজমিন দেখা গেছে, আজ সন্ধ্যায় নগরের জেএমসেন হল দেবীর বোধন ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়। এসময় চণ্ডীপাঠসহ আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এসময় সেখানে পুজ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। নিরাপত্তায় পূজামণ্ডপের প্রবেশপথে বসানো হয়েছে আর্চওয়ে। এছাড়া মণ্ডপের ভেতর নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা গেছে সতর্ক অবস্থানে।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে দুর্গাপূজায় মানতে হবে ১৫ নির্দেশনা

এদিকে পূজা উপলক্ষে মণ্ডপগুলোতে রয়েছে নানা ধর্মীয় আয়োজন। পূজা চলাকালে মণ্ডপে প্রতিদিন পূজা, চণ্ডীপাঠ, জাগরণ পাঠ, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতি করা হবে। এছাড়া স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ রয়েছে নানা কর্মসূচি।

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী দুর্গা এবার মর্তে আগমন করবেন দোলা বা পালকিতে। ফল মহামারী ও দুর্ভোগ। আর গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। ফল ছত্রভঙ্গ। অর্থাৎ সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। আসা-যাওয়ার উভয় ক্ষেত্রেই ফল অশুভ।

প্রসঙ্গত, গত বছর দেবী দুর্গার আগমন-গমন হয়েছিল ঘোড়ায়। শাস্ত্রমতে বলা হয়েছ, কোনো বছর যদি দেবী দুর্গার আগমন ও গমনের বাহন একই থাকে, তা অশুভ প্রভাব বিস্তার করে।

সাধারণত আশ্বিনের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন, অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন পর্যন্ত পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও শুভ মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা হয়। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় হয় সমাপ্তি। গত ৬ অক্টোবর শুভ মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই দিন থেকেই পূজার সময় ও ক্ষণ গণনা শুরু হয়।

বোধন অর্থ দেবীকে জাগ্রত করে আহ্বান করা। সনাতন বিশ্বাসে, কৈলাস ছেড়ে পিতৃগৃহে আসা দুর্গার অকালবোধন আজ। বোধনের পরই হবে ষষ্ঠীপূজা। ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে বিভিন্ন মণ্ডপে দেবীর অধিষ্ঠান দেওয়া হবে। এদিন সন্ধ্যায় ধূপের ধোঁয়ায় সায়ংকালে কাঁসর-মন্দিরা ও ঢাক-ঢোলের বাদ্য আর পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে ধ্বনিত হবে— ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নম নম।’

মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে স্বামীর গৃহ কৈলাস ছেড়ে দেবী দুর্গা পিতৃগৃহে আসবেন দোলায় চড়ে। আর বিজয়া দশমীর দিন ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে।

আরও পড়ুন : দুর্গাপূজায় ছুটি বাড়ছে

দেবী দুর্গার আগমন ও গমনে শাস্ত্রে বলা হয়েছে— ‘রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ, গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।’ সপ্তমীর দিন যদি রোববার এবং সোমবার হয়, তাহলে দুর্গার আগমন ও গমন হবে গজে। ফল— “গজে চ জলদা দেবী শস্যপুর্ণা বসুন্ধরা’। ঠিক এই রকমই শনিবার ও মঙ্গলবারে দুর্গার আগমন ও গমন হলে, ঘোটকের প্রভাব থাকবে। যদি বুধবারে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন হয়, তাহলে তিনি আসবেন এবং যাবেন নৌকায়। ফল— “শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম’। আবার দুর্গার আগমন ও গমন যদি বৃহস্পতি ও শুক্রবারে হয় তাহলে তিনি দোলায় আসবেন এবং যাবেন। ফল- “দোলায়াং মরকং ভবেৎ।

এদিকে পূজাকে সামনে রেখে পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত জেএমসেন হল প্রাঙ্গণে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল। তিনি জানান, আজ বিকাল ৫টায় গীতাপাঠ, সন্ধ্যা ৬টায় প্রতিমা মঞ্চের আবরণ উন্মোচন ও সন্ধ্যারতি এবং সাড়ে ৬টায় মায়ের বোধন ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের শুভেজ্ঞা জ্ঞাপন এবং রাত সাড়ে ৮টায় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় আাইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রয়েছে।

এছাড়া নগরের অন্যান্য পূজামণ্ডপে পূজা-অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষাবৃত্তি, বস্ত্র ও শিক্ষাসামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এবার চট্টগ্রাম নগরের ১৬ থানায় ২৯২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৫৯৪টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা ও ৫২৮টিতে হবে ঘট পূজা।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm