চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার ধুমপাড়া শাহাবুদ্দিন কলোনিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে শক্তিশালী অপরাধ চক্র। মদ, গাঁজা, ইয়াবা—এমন কোনো মাদক নেই ,যা ওই কলোনিতে পাওয়া যায় না। এছাড়া কলোনিতে বসে জুয়ার আসর, রাতভর চলে সুন্দরী রমনীদের নিয়ে রঙ্গশালা। গত তিন বছর ধরে দুই ‘সম্রাট’ ও এক ‘সম্রাজ্ঞীর’ ইশারায় এ অপরাধ সম্রাজ্য চলে আসলেও প্রশাসন যেন কিছু জানে না।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, এ কলোনি থেকে মোটা অংকের মাসোহারা যায় অসাধু পুলিশ অফিসারদের পকেটে। তাই বিষয়টি জানলেও কিছুই করেন না তারা।
এলাকাবাসী জানায়, কলোনিতে নিয়মিত জুয়ার আসর বসান কলোনির ইনচার্জ জুয়া সম্রাট শাহবুদ্দিন। সেখানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ইয়াবা বিক্রি করে পুলিশের সোর্সখ্যাত মাদক সম্রাট হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব। এছাড়া রঙ্গশালায় রমনীদের যোগান দেন পতিতা সম্রাজ্ঞী আকলিমা বেগম ওরফে সালমা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধুমপাড়া শাহাবুদ্দিনের টিনশেড কলোনির মূল মালিক মো. জসিম উদ্দিন। নগরীর আগ্রাবাদে তার বাড়ি। এক যুগ আগে কলোনি কন্ট্রাক্টে নিয়ে নেন শাহাবুদ্দিন। সেই থেকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ কলোনিতে ও আশপাশ এলাকায় জুয়ার আসর বসান তিনি। শাহাবুদ্দিন ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছের ছেলে। তিনি কলোনিতে মাদক বিক্রি ও দেহ ব্যবসার সেল্টারদাতাও। এসব কাজের জন্য ভাড়ার বাইরেও আলাদা টাকা পান শাহাবুদ্দিন। এসব অপকর্ম ঢাকতে মুক্তিযোদ্ধা বাবার পরিচয় ব্যবহার করে শাহাবুদ্দিন।
এদিকে কলোনিতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ইয়াবা বিক্রি করেন পুলিশের সোর্স খ্যাত মাদক সম্রাট হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব। ওই কলোনিতে বসে সে টেকের মোড় ও কলসিদীঘির পাড়সহ আশপাশ এলাকার মাদকসেবীদের ইয়াবার যোগান দেন। সোর্স হাবিবের বাড়ি ফটিকছড়ি এলাকায়। তার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় বেশ কয়েকটি মাদকের মামলা রয়েছে।
পতিতা সম্রাজ্ঞী আকলিমা বেগম প্রকাশ সালমা। তার বাড়ী ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলায়। শাহাবুদ্দিন কলোনিতে কয়েকটি রুম ভাড়ায় নিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণীদের দিয়ে দেহব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। গত তিন বছর ধরে সালমা এসব অপকর্ম চালিয়ে আসলেও পুলিশ অভিযান চালিয়েছে মাত্র একবার। তখন তাকে জামিনযোগ্য ধারায় চালান করা হলেও পরে আর কোনো অভিযানের খবর নেই। মেয়েদের আটকে রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা এবং বিভিন্ন লোককে জিম্মি করে টাকা আদায় ও দামি মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে সালমার বিরুদ্ধে।
আব্দুল হালিম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন কলোনির অপরাধ সম্রাজ্যের তিন সম্রাট-সম্রাজ্ঞী তাদের অপরাধ কার্যক্রমে আলাদা আলাদা ব্যক্তিদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। শাহাবুদ্দিন ব্যবহার করেন বাবা ইউনুছের মুক্তিযোদ্ধা খেতাব। ছেলের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে পিতা মো. ইউনুছ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও এলাকায় কেউ তাকে সম্মানের চোখে দেখেন না। এছাড়া সোর্স হাবিবুর রহমান হাবিবের ঢাল হিসেবে ব্যবহার হন বাকের আলী টেকের মোড় পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)মোরশেদ আলম এবং সালমা নাম ভাঙান থানার বিভিন্ন অফিসারের। এক সময় থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালাহ উদ্দিনের নাম ব্যবহার করতেন। এরপর এখন নাম ব্যবহার করেন টেকের মোড় ফাঁড়ির ইনচার্জ শরিফুলের। তবে সাম্পতিক তিনি বদলি হয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত শাহাবুদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘এসব বিভিন্ন কলোনিতে হয়, হোটেলেও হয়। আপনারা রিপোর্টাররা শুধু আমার কলোনি দেখেন কেন? আপনি আমার গদিতে আসেন, আমার সঙ্গে কথা বলেন। সম্পর্ক রাখেন, আপনার জন্য ভালো হবে। এ সময় ওই এলাকার সালাম কলোনিতে আসিফ ও আরিফ নামে আরও দুইজন ইয়াবা বিক্রি করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি, বিষয়টি দেখছি। একটু সময় দেন। আমি ব্যবস্থা নেব।’
চট্টগ্রাম নগরের আরও খবর পড়ুন