অপরাধের ‘বরপুত্র’ লম্বা সুমন। চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ এলাকার আতঙ্ক। খুন-খারাবি, মাদক, ডাকাতি, কিশোর গ্যাং, দখলবাণিজ্য, চাঁদাবাজি সব নিয়ন্ত্রণই তাঁর হাতে। এলাকার লোকজন লম্বা সুমনের নাম শুনলেই ভয়ে আঁতকে ওঠেন। এতো অপরাধ করেও পার পেয়ে যান শুধুই যুবলীগ নেতার তকমায়।
তবে এসবের মধ্যেও এলাকায় কোনো ঝামেলা হলেই দেখা মিলে তাঁর। এরপর পুলিশের ভয় দেখিয়ে দুপক্ষ থেকেই হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। শেষে পুলিশকে ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হলে হুমকি-ধমকি দেন দুপক্ষকেই। এর ফাঁকেই মেরে দেন বড় অঙ্কের টাকা।
ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র মামলাও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। খেটেছেন জেলও। কিন্তু আইনের ফাঁক-ফোকরে জেল থেকে বের হয়েই ফের জড়িয়ে পড়েন অপরাধে।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে যান তিনি। আবার তাঁর অপরাধের বিষয়ে কেউ মুখ খুললেই হতে হয় এলাকাছাড়া।
অভিযোগের পাহাড় জমা এই ব্যক্তি হলেন ৯ নম্বর যুবলীগের সহসভাপতি মো. হানিফ সুমন প্রকাশ লম্বা সুমন। তিনি নগরের আকবরশাহ থানার নিউ শহীদ লেইন এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয়রা বলছেন, আকবরশাহ এলাকায় হানিফ সুমন প্রকাশ লম্বা সুমনের চাঁদাবাজি, জমি দখল ও মাদক বাণিজ্যর শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট রয়েছে। এছাড়া রয়েছে কিশোর গ্যাং। এদের মাধ্যমেই এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই হতে হয় এলাকাছাড়া।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৪ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আকবরশাহ থানার নিউ শহীদ লেইন মুক্তকন্ঠের পাশে লম্বা সুমনের ভাড়া ঘরের টয়লেটে নিয়ে সোনিয়া আক্তার মনি (১১) নামের এক শিশুকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে আহসান উল্লাহ খান (৪৯)। এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন সুমন প্রকাশ লম্বা সুমন। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগীর বাবা টিটু মিয়া বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় অভিযোগ করেন। এরপর অভিযুক্ত আহসান উল্লাহ খানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
এলাকাবাসী জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লম্বা সুমন অভিযুক্তকে প্রথমে আটক করেন। এরপর টাকা আদায়ের জন্য চাপ দেন। এসময় টাকা না দিলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া ভুক্তভোগী সোনিয়ার পরিবারকে থানায় অভিযোগ না দিতে ভয় দেখান লম্বা সুমন।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. বাপ্পী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মো. হানিফ সুমন প্রকাশ লম্বা সুমন ওই শিশুকে শ্লীলতাহানির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তিনি হাতেনাতে ধরে পুলিশকে খবর না দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন পুলিশকে ম্যানেজ করার কথা বলে। এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ যদি থানায় গিয়ে অভিযোগ দেয় তাহলে তাকেও জানে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি। একপর্যায়ে অভিযুক্তের কাছ থেকে টাকাও আদায় করা হয়। কিন্তু এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি। পরে স্থানীয় লোকজন খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে অভিযুক্ত আহসান উল্লাহ খানকে আটক করে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিউ শহীদ লেইন এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, লম্বা সুমন এলাকায় এককভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে অপরাধ করেও পার পেয়ে যান বারবার।
স্থানীয়রা জানান, শহীদ লেইন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ লম্বা সুমনের আত্মীয়। তাঁর ভাই রাজন প্রকাশ ইয়াবা রাজন হচ্ছে শহীদ লেইনের মাদক ব্যবসায়ীদের একজন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া লম্বা সুমনের বউয়ের বড় বোন রিনা ও শিরিন ডজনখানেক মাদক মামলার আসামি।
এদিকে শিরিনের স্বামী আব্দুল ওয়াদুদ আকাশের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। তবে লম্বা সুমনের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা না থাকলেও রয়েছে ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র মামলা।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী শিশু সোনিয়া আক্তার মনির পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হানিফ সুমন প্রকাশ লম্বা সুমন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি শ্লীলতাহানির বিষয়টি পুলিশ এনে সমাধানের চেষ্টা করেছি মাত্র। আর জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ে একটি কুচক্রি মহল আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দিন আকবর আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, শিশু শ্লীলতাহানির অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এরপর মামলা করে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, আমার থানা এলাকায় অপরাধীদের পক্ষে পুলিশ কখনও অবস্থান নিবে না। মাদক, জুয়া, জমি দখল এবং ধর্ষণের মতো অপরাধ ও অপরাধীদের স্থান নেই। কেউ যদি পুলিশের নাম ভাঙিয়ে অপরাধীদের বাঁচাতে চায় তাহলে আমাকে জানানোর অনুরোধ করছি। আমি অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম